কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, ব্যাতাইতলা, শিবপুর, ২৫ এপ্রিল#
আমাদের পাড়ায় শওকত-দা, শওকত আলির দীর্ঘদিনের সেলুন। নিজের হাতেই চুল-দাড়ি কাটেন। শান্তশিষ্ট ভদ্র মানুষ। মাঝবয়স পেরিয়েছেন। স্ত্রী নেই, ছেলে-বউ, মেয়ে নিয়ে তাঁর ঘর সংসার। ওঁর বাড়ি মজফফরপুর, বিহার। সত্তরের দশক থেকে বাংলায়।
সেদিন চুল কাটতে গিয়ে ভোটের কথা তুলতেই বললেন, ‘আর বলবেন না। আমার ভোটার কার্ডে কী করেছে দেখুন!’ দেখি, ভোটার কার্ডে দাদার নাম ‘সৌগত আলি’। আমি বললাম, কত রকম ভুল যে এরা করেন। আমার নামটাও তো কৃষেন্দু মণ্ডল হয়েছে, কৃষ্ণেন্দুর পরিবর্তে। অবশ্য নামে কীই বা আসে যায়, আমরা সবাই তো ভোটার, এইটাই এখন পরিচয়।
বললাম, আপনার দেশে ভোটের খবর কী?
— আমাদের দেশে নীতিশকুমারই এগিয়ে, তবে লালুপ্রসাদও এবার ভালো ফল করবে।
— নীতিশকুমারের সময় কাজ কিছু হল?
— কাজ বলতে রাস্তাঘাট হয়েছে, আগে স্টেশন থেকে বাড়ি পৌঁছতে অনেক দেরি হত। সন্ধ্যে গড়িয়ে যেত। এখন সুন্দর রাস্তা হয়েছে, অনেক তাড়াতাড়ি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পোঁছে যাই। আগে থানায় গেলে পুলিশ রিপোর্ট লিখতে চাইত না। এখন শুনি রিপোর্ট লেখে, ব্যবস্থা নেয়। আইন-শৃঙ্খলা অনেক ভালো হয়েছে। তবে ছোটো জাতের মানুষের কোনো ইজ্জৎ নেই। কেন? ‘মুশাহর’ বা অন্যান্য ছোটো জাতের লোক, যারা রাস্তার পাশে খোপড়ি করে থাকে, তাদের ঘরের মেয়েদের ইজ্জৎ বাঁচাতে পারে না। রাতের বেলা উঁচু জাতের নেতা লোকজন সহ গাড়ি করে এসে নামল, ঘরে ঢুকে মেয়েদের ইজ্জৎ লুঠে চলে গেল। যাবার সময় বন্দুক দেখিয়ে বলে গেল, ‘কাউকে কিছু বলবি তো জানে মেরে দেব’। লোকে ভয় চুপ করে থাকে। আগে তো আরও খারাপ অবস্থা ছিল, মনে পড়ে আমার ছোটোবেলায় মামাবাড়ি গেছি, কলে জল আনতে পাঠিয়েছে। তখন ছোটো ছেলে। জানি না তো, মাটির কলসি ছুঁয়ে ফেলেছিলাম। সে মাটির কলসি তো আছড়ে ভেঙে ফেললই, তারপরে আমার মামাকে কলসি কেনার জন্য পয়সা দিতে হল। এখন আস্তে আস্তে অবস্থা ভালো হচ্ছে। …
বললেন, সেন্ট্রালে কংগ্রেসই আসবে। তবে আম আদমি পার্টি-ও ৫০-৭০ টা সিট পাবে। — বলেন কী? — না! কংগ্রেস তো এবার একের পর এক স্ক্যামে জড়ালো।
চুল কাটা শেষ। আমিও চলে আসি।
Leave a Reply