কুমার দিলীপ, গুমলা, ঝাড়খণ্ড, ৩০ মে#
লোকে প্রায়শই পুরোনো জিনিস ভুলে যায়, নতুন জিনিস নিয়েই মেতে ওঠে। কিন্তু একশো বছর আগের কোনো আন্দোলনের কথা মনে করেও চাঙ্গা হয়ে ওঠা যায়। ১২৫ বছর আগে গুমলা জেলার বিষুণপুর অঞ্চলের চিঙরি নবাটোলী গ্রামে ১৮৮৮ সালে এক শিশু ছোটো চাষি পরিবারে জন্ম নিয়েছিল। তার নাম রাখা হয়েছিল, জাত্রা ভগত। ১৯১৪ সালে গুরদাকোনার তীরে তাঁর চেতনার উন্মেষ ঘটে। ওই ১৯১৪ সালেই জাত্রা ভগত তিন ব্যবস্থা — মালগুজারি বা করদ প্রথা, মহাজনী প্রথা ও জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। হেসরাত গ্রামের অধিবাসী তুরিয়া ভগত-কে গুরু বলে মেনে নিয়ে জাত্রা ভগত তিন সীমানি-তে একটি গাছের নিচে শিক্ষাদীক্ষা নিতে শুরু করেন এবং আন্দোলন তীব্রতর করেন। আন্দোলনে আরও সঙ্গীসাথি জুটে যায়। নিজের ধর্ম ও আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভগত শুরু করেন টানা প্রথা। তার ফলে তাঁর নামের আগে জুড়ে যায় টানা, তাঁকে ডাকা হতে থাকে জাত্রা টানা ভগত নামে। আন্দোলনের ফলে তিনি গ্রেফতার হন। রাঁচি জেলে অন্যান্য সাথিদের সঙ্গে তাঁর ঠাঁই হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯১৬ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই মহাপুরুষ ও মহান আন্দোলনের শতবর্ষ স্মরণে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। ২৫ মে জাত্রার পৈতৃক গ্রাম চিঙরি নবাটোলীতে এই সমাবেশ হয়। জাত্রা টানা ভগত-এর গুরু তুরিয়া টানা ভগতের নাতি এই সমাবেশে বলেন, ১৯১৪ সালে তিন সীমানি-তে গুরুর কাছে শিক্ষা নিয়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন জাত্রা। মহারাজা শাসন ছাড়ো, ইংরেজ ভারত ছাড়ো, মালগুজারি দেওয়া বন্ধ করো — এই ডাক দেন তিনি। আন্দোলনকারী জনতা বল পায়।
জাত্রা টানা ভগতের নাতি বিশুবা টানা ভগত বলেন, আন্দোলনের শুরু ১৯১২ সালেই হয়ে গিয়েছিল। ইংরেজরা যখন জাত্রার কাছ থেকে মালগুজারি নিতে আসত, তখন জাত্রা বলত, আমরা গরিব। দ্বিতীয়বার এসে তারা যখন বলত, এক টাকা অন্তত দাও, তখনও জাত্রা বলত, আমরা গরিব। আমরা আর মালগুজারি দেব না। তখন ইংরেজ বুঝল, এরা তো বিদ্রোহ করছে। তখন গ্রেফতার করা শুরু হল।
পৌসা টানা ভগত বলতে উঠে আজকের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া বন্দনা টেটে, ডা. সুনীতা, কুমার দিলীপ, দীপক, কৃষ্ণা টানা ভগত বক্তব্য রাখেন। সভার সঞ্চালক ছিলেন কার্তিক টানা ভগত। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেকরো টানা ভগত।
Leave a Reply