শ্রীমান চক্রবর্তী, কলকাতা, ৩১ মার্চ, ছবি লেখকের তোলা#
কলকাতা পুরসভার ১০৪ নং ওয়ার্ডের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ও ৯২ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সীমানার মাঝখানে প্রায় সাত বিঘার বড়ো একটি জলাশয় বা ঝিল রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জলাশয়টি ব্যাঙ্কপ্লট — শহিদনগর ও সুইটল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত। জলাশয়টি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় অনেকাংশ জুড়েই ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়েছে এবং জলজ উদ্ভিদ জলের উপরে এমনভাবে গজিয়েছে যে কোথাও কোথাও জলের তল দেখা যায় না। এই অবস্থায় পরিত্যক্ত এই বড়ো জলাশয়টিকে মাটি-রাবিশ দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু অসাধু প্রমোটার, দালাল সহ নানা ধরনের এজেন্টরা। এই অসাধু প্রোমাটারদের উদ্দেশ্য হল জলাশয়ের মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করে সুইটল্যান্ডকে ব্যাঙ্কপ্লট ও শহিদনগরের সঙ্গে যুক্ত করা। তাদের এই অসাধু উদ্দেশ্যকে মদত দিচ্ছে স্থানীয় কিছু নানা রঙের মোড়ল। কিন্তু ব্যাঙ্কপ্লট-সুইটল্যান্ড ও শহিদনগরে কিছু প্রবীণ মানুষের প্রতিবাদ প্রোমাটার দালালদের সেই প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে আসছে মৃদু হুমকি আর শাসানি। কিন্তু কোনোকিছুই সত্তর উর্দ্ধ বৃদ্ধদের টলাতে পারেনি। অমলবাবু ও নির্মলবাবু উভয়েই আমাদের কাছে আদর্শ। কেননা চৈত্রের দুপুরের কড়া রোদে তাঁরা বেরিয়েছেন জলাশয় বোজানোর বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কিন্তু আমাদের কর্মসূচিকে বন্ধ না করেই ওঁরা বসে থেকেছেন আমাদের কাজে উৎসাহ দিতে। আর আমরা যখন গণস্বাক্ষর করার জন্য ব্যাঙ্কপ্লটের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে যাচ্ছিলাম, তখন দেখতে পেলাম কয়েকজন যুবক তাদের অ্যাসোসিয়েশনের ঘরে ক্যারাম খেলছে। আমরা তাদেরকে আমাদের দাবির সাথে সহমত প্রকাশের জন্য আবেদন করি এবং মনে কিছুটা বিস্ময়ও প্রকাশ করি যে এই অশীতিপর বৃদ্ধরা এগিয়ে এসেছেন নিজেদের পাশের জলাশয় বাঁচাতে, অথচ সেই অঞ্চলের নবীনরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জলাশয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে উদাসীন।
ইতিমধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতেই গরফা থানার ওসি, ১০৪নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা ও ৯২নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা, ১০নং বরো চেয়ারম্যান, কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ইন কাউন্সিলের কাছে জলাশয় বোজানোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয় এবং পরিবেশবিদ, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের দীর্ঘদিনের আমাদের সাথিরা একটি সভারও আহ্বান করেন। সেই সভাই ১০৪নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা, ৯২নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা ও ১০নং বরোর চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে জলাশয়টির সংস্কার ও উপযুক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। এমনকী সভাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে জলাশয়ের চারদিকে ছোটো রাস্তা তৈরি করা হবে এবং বসার ব্যবস্থা করা হবে যাতে অঞ্চলের বৃদ্ধ ও শিশুরা এখানে সকাল-বিকাল মুক্ত আলো-বাতাসে ভ্রমণ করতে পারে। ৯২ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতার উদ্যোগে ১০০ দিনের কর্মীদের সাহায্যে জলাশয়ের কিছু অংশের আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু ১০৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতার কাছ থেকে বিশেষ কোনো সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
ব্যাঙ্কপ্লট-সুইটল্যান্ড ও শহিদনগরের নাগরিকবৃন্দের উদ্যোগে একটি কমিটি গঠিত হয়, যাদের সক্রিয় উদ্যোগে বিষয়টি আমাদের অঞ্চলের বিধায়কেও জানানো হয়। কয়েকটি নামী সংবাদপত্রেও এই জলাশয়টি সম্পর্কে খবর ছাপা হলেও পৌরসভার তরফে নানান আর্থিক ও প্রশাসনিক লাল ফিতের কারণ দেখিয়ে সংস্কারের কাজ এখনই করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে জলাশয়ের আশেপাশের কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করে যে রাতের অন্ধকারে রাবিশের লরি পশ্চিম দিক থেকে ঢুকে জলাশয় বুজিয়ে রাস্তা তৈরি করতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে অঞ্চলের নাগরিকগণ তাদের দাবিপত্রসহ চিঠি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও জানিয়েছে। কিন্তু তাতেও এখন পর্যন্ত পুরসভার তরফে কোনো সক্রিয় সহযোগিতা মেলেনি। তবে অঞ্চলের নাগরিকদের উদ্যোগে কিছু এনজিও এই জলাশয়টিকে সাময়িকভাবে পরিষ্কার করতে সম্মত হয়েছে। এই কাজের জন্য পুরসভার তরফে নো অবজেকশনের ছাড়পত্রও মিলেছে ৯২নং ওয়ার্ডের পৌরমাতার তৎপরতায়। বর্তমানে জলাশয়টি পরিষ্কার করার কাজ বেসসরকারিভাবে করার উদ্যোগ চলছে। আমরাও পরীক্ষার সময়ে প্রত্যেক রবিবার ছুটির দিনগুলিতে হ্যান্ড মাইক নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের প্রোমোটারি অসাধু দালালদের অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক করা ও গণসচেতনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, সেই অশীতিপর বৃদ্ধের নেতৃত্বে।
Leave a Reply