শান্তিপুর শহরের তামলিপাড়া, উড়িয়া গোস্বামীপাড়া, ভবানীপাড়া, ডাঃ বি সি রায় রোড, সূত্রাগড় আচার্য্যপাড়া, কুটীরঘাট, বেড়পাড়া, নৃসিংহপুর সাহেবডাঙা, ছুতোরপাড়ায় ১৬টি প্রশ্নের ভিত্তিতে সমীক্ষা করা হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন অরিজিৎ দাস, সুচিত্রা দাস, শ্রাবণী সাহা, তৃষা প্রামাণিক, তন্ময় সরকার, শমিত আচার্য্য, ফজলুল করিম এবং নাম জানা যায়নি এরকম কয়েকজন ভাড়াটে বাসিন্দা। সমীক্ষাতে শান্তিপুরের সামগ্রিক কোনো চিত্র উঠে আসেনি। খণ্ড খণ্ড কিছু তথ্য এসেছে, সেটাও শান্তিপুর শহরের। সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছেন শমিত আচার্য্য।
শান্তিপুর শহরে জল সরবরাহ করে শান্তিপুর পৌরসভা। সেই জলের জন্য মাসে ৩০ টাকা করে বাড়িওয়ালাদের দিতে হয়। দিনে তিনবার জল আসে টাইমকলে। অনেক বাড়িতে নলকূপ বা টিউবওয়েল আছে, কিছু বাড়িতে কুয়ো আছে। তবে কুটীরঘাটে পাড়ার ভিতরে পৌরসভার জলের লাইন ঢোকেনি। আশেপাশে ব্যবহারযোগ্য পুকুর বা জলাশয় আছে ডাঃ বি সি রায় রোডে। কুটীরঘাটে কিছু জলাশয় এবং পুকুর আছে। সেখানে কোথাও মাছ চাষ হয়, জলাভূমিতে পাট চাষও হয়। এগুলো মোটামুটি পরিষ্কার। পানীয় হিসেবে না হলেও অনেকেই কাপড় কাচা এবং স্নান করে পুকুরের জলে। তবে সারা বছর পরিমাণ মতো জল থাকে না। সাহেবডাঙায় কিছু ব্যক্তিগত পুকুর আছে। উড়িয়া গোস্বামীপাড়ায় জলাশয় যেগুলো ছিল, মজে গেছে, এখন আর ব্যবহারযোগ্য নয়। ভবানীপাড়াতেও পুকুর ব্যবহারের অযোগ্য। ছুতোরপাড়াতেও তাই। পানীয় জলের জন্য বেশিরভাগ পাড়াতেই নলকূপই ভরসা। অন্যান্য কাজের জন্য কুয়ো, টাইমকল, পুকুর এববগ জলাশয়, যেখানে যেমন পাওয়া যায় ব্যবহার করা হয়। তার ফলে কিনে জল পান করার অভ্যাস এখনও তেমনভাবে এখানে প্রবেশ করেনি। যারা সেরকম দরকারে কখনো কিনে বোতলের জল খায়, তাদের মধ্যে কেনার সময় সেই জল বোতলবন্দি করার ছাপা তারিখ দেখার অভ্যাস নেই।
বাড়িতে শৌচাগার অনেকে নিজেরাই করে। স্কুলগুলোতে সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তবে কোনো কোনো স্কুলে জলের ব্যবস্থা ঠিকঠাক নেই, অর্থাৎ কল খারাপ বা জল অপর্যাপ্ত, যেমন, সূত্রাগড় এম এল হাই স্কুলে। বেড়পাড়ায় ছেলেদের স্কুল মাধ্যমিক থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হচ্ছে। স্কুলের দুটো বাড়ি রয়েছে রাস্তার দু-ধারে। দুটোতে ছাত্রদের মূত্রত্যাগের জায়গা থাকলেও আলাদা শৌচালয় নেই। প্রয়োজনে তারা শিক্ষক ও কর্মীদের শৌচালয় ব্যবহার করে। মূত্রত্যাগের জায়গাতেও জলের ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেক সময় ছেলেরা তার বাইরেই কাজ সারে।
রেল স্টেশনে পুরুষদের শৌচালয় আছে, জলের ব্যবস্থাও রয়েছে। মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা নেই। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে মূলত শৌচালয় নেই। বাজারগুলোতে কোথাও কোথাও পৌরসভার জলের ব্যবস্থা আছে, কোথাও কাছাকাছি টিউবওয়েল আছে। কিন্তু প্রায় কোনো বাজারেই শৌচালয় নেই।
বর্ষায় কোনো কোনো পাড়ায় জল জমে। বর্ষায় পেটের অসুখও হয়। তবে জলদূষণ কতটা হয়, সে সম্বন্ধে লোকে তেমনভাবে অবহিত নয়। কোথাও কোথাও নর্দমার জল জমে পচে থাকে। আচার্য্যপাড়ায় আগের চেয়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে। কুটীরঘাটে পাট পচানোর সময় গন্ধ হয়। বেড়পাড়ায় কোনো বাড়িতে নলকূপের জলে প্রচুর আর্সেনিক আছে। পৌরসভার জলে ব্লিচিংয়ের গন্ধও পাওয়া যায়। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ফিল্টার ইত্যাদি ব্যবহার করে।
বেড়পাড়ায় নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য পৌরসভা থেকে একজন লোকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর এই কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে সামান্য টাকা পাড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেই টাকা দিতে নারাজ থাকার ফলে নর্দমা পরিষ্কার নিয়মিত হয় না, পরিবেশ দূষিত হয়।
Leave a Reply