২৫ এপ্রিল, শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন#
মেটিয়াব্রুজের বড়তলা ক্রমবর্ধিষ্ণু এক ব্যবসাকেন্দ্র। অজস্র কাপড়ের দোকান, জোগাড়, মাছ–মাংস–সব্জির দোকান, স্টেশনারি–বইয়ের দোকান, কনফেকশনারি আইটেম প্রভৃতি হরেকরকম দোকানপসারে বড়তলা নিত্য জমজমাট। হাজার হাজার ক্রেতা–বিক্রেতার আগমনে, রকমারি জিনিসের আদানপ্রদানে, লোকে লোকারণ্যে দিনেরবেলায় অতি ব্যস্ত বড়োবাজারের ক্ষুদ্র সংস্করণে পরিণত হয়। এর ওপর রয়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চাপ। ফলে কোলাহলে, মানুষের সরগরমে বড়তলা অঞ্চলে (বুধবার, বৃহস্পতিবার, শনিবার, রবিবার ও সোমবার) তিলধারণের জায়গাটুকু থাকে না। এইরকম একটি অঞ্চলে সুলভ শৌচাগার নেই, একথা এই যুগে বসে কি ভাবা যায়? একদা বড়তলার আগাম অগ্রগতির কথা অনুধাবন করে বহু পূর্বে রাস্তার সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল, ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল রাস্তার দুধারের দোকানঘরগুলিকে, জনগণকে এই বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, বড়তলায় আধুনিক সুযোগ–সুবিধা সম্পন্ন সুপার মার্কেট, সব্জি–মাছ–মাংসের দোকান, ব্যাঙ্ক পরিষেবা গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিক কাজ হিসেবে রাস্তার সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেই সুপার মার্কেট, ব্যাঙ্ক পরিষেবা? দোকানদারদের পুনর্বাসন হিসেবে ছোটো ছোটো দোকানঘর দেওয়া হল। কিন্তু তাদের প্রাতঃকৃতের কোনো শৌচাগার গড়ে তোলা হল না, হাজার হাজার পথচলতি মানুষ, ক্রেতা–বিক্রেতা বাথরুম করার জন্য কখনো ছুটে যায় স্কুলে, আবার কখনো কাপড়ের মার্কেটগুলিতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও মার্কেটওয়ালাদের আপত্তিতে তারা অসহায় হয়ে পড়ে। অথচ বড়তলার বর্তমান বাজারের মালিকদের সঙ্গে রফা করে পুরসভা আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত সুপার মার্কেট, উন্নতমানের সুলভ শৌচাগার গড়ে তুলতেই পারে। কিন্তু সেই চেষ্টা আজ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। আসলে তাদের সদিচ্ছা নেই। একটু দূরে আকড়া ফটকে দু–দুটি সুলভ শৌচাগার গড়ে তোলা হয়েছে মহেশতলা পুরসভা ও কলকাতা কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে। তাহলে বড়তলার বেলায় এত বঞ্চনা কেন? এই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে বড়ো বড়ো বুলি আউড়ানো হয়। অথচ এই জনাকীর্ণ বাজারে একটা সুলভ শৌচাগার নেই। এ থেকেই কলকাতা কর্পোরেশনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বলে পথচলতি মানুষের ধারণা। স্থানীয় কাউন্সিলার, বিধায়ক এবং এলাকার নেতা–নেত্রীরা এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব। জনৈক পথচারী বললেন, এদের ভোটে জেতানোয় আমাদের কাজ, অথচ আমাদের ব্যাপারে মাথা ঘামানোর সময় তাদের নেই। তাই বড়তলা অঞ্চলের মানুষের কপালে জুটেছে বঞ্চনা, বঞ্চনা আর শুধুই বঞ্চনা।
Leave a Reply