ছবিগুলি লোকেশ মালতীর তোলা। রিপোর্ট ও ছবির সূত্র দি হিন্দু পত্রিকা এবং সংঘর্ষ সংবাদ ওয়েবসাইট, ২৫ মে#
মধ্যপ্রদেশের মান্ডলা জেলায় প্রস্তাবিত ১৪০০ মেগাওয়াটের চুটকা পরমাণু প্রকল্পের জন্য জনশুনানি হওয়ার কথা ছিল ২৪ মে। কিন্তু গ্রামবাসীদের প্রতিরোধে তা ভেস্তে গিয়েছে। জনশুনানির আগে জেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য জনশুনানি স্থগিত ঘোষণা করে। ২৪ মে বিজয়মিছিল বের করে ৩৮টি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। এই গ্রামবাসীরা বেশিরভাগই গোন্দ জাতির। এই মিছিলে পরমাণু প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীরা উপস্থিত ছিল। এই প্রকল্পটির কথা ১৯৮০-র দশক থেকে বলা হচ্ছে। ২০০৯ সালে এনপিসিআইএল এই প্রকল্পের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়। নারায়ণগঞ্জ তহশিলে নর্মদা নদীর ধারে ৫০০ হেক্টর জায়গা ঠিক হয় পরমাণু প্রকল্পের জন্য।
১৯৮৪ সালের বারগি জলাধার প্রকল্পের জন্য উদ্ধার হওয়া হাজার হাজার গোন্দ প্রজাতির মানুষ নর্মদা নদী দিয়ে নৌকা চালিয়ে চলে এসে চুটকা, তাতিঘাট, কুনদা, মানেগাঁও-এর আদিবাসীদের সাথে যোগ দেয় চুটকা পরমাণু প্রকল্পের বিরুদ্ধে মিছিলে। পাশের সেওনি জেলায় উচ্ছেদ হয়ে ঠাঁই পাওয়া এই আদিবাসীরা তাদের ক্ষোভ উগরে দেয়। জানায়, মা নর্মদা নদী এই পরমাণু প্রকল্প চায় না। যদি এটা হয়, তাহলে আমরা সবাই ডুবে যাব। ভালো হয়েছে ওরা চলে গেছে। আজ আমি কিছু খাই নি, তবু আমার নাচতে ইচ্ছে করছে — বলেন ১৯৮৪ তে উচ্ছেদ হওয়া রাধাবাঈ। ১৯৮০ র দশকে তার ১৯ একর জমির জন্য তিরিশ হাজার টাকা মতো পেয়েছিলেন রাম সিং (৭০)। তাঁর কথায়, আমরা পাখির মতো এ জায়গা থেকে ও জায়গা উড়ে বেড়িয়েছি খাদ্যের সন্ধানে। উদ্বাস্তুদের নৌকা মিছিল-এর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পূর্বতন গন্ডোয়ানা গণতন্ত্র পার্টির নেতা মহতলাল বারকাদে। এছাড়া ছিল সিপিআইএমএল-এর কে এন রামচন্দ্রন গোষ্ঠীর কর্মীরা। মূল মিছিলটিতে গ্রামবাসীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন চুটকা পরমাণু সংঘর্ষ সমিতি। ছিলেন সমাজকর্মী সন্দীপ পান্ডে।
মিছিল শেষে জনসভায় নিম্নলিখিত দাবিগুলি তোলা হয় :
১) চুটকা পরমাণু শক্তি প্রকল্প সহ সমস্ত পরমাণু প্রকল্প বাতিল করো এক্ষুনি।
২) ভারতের পরমাণু বিদ্যুৎ কার্যক্রম স্থগিত করো। সমস্ত পরমাণু প্রকল্প বাতিল করে নিরাপদে সেগুলির ডিকমিশনিং কর।
৩) ইউরেনিয়াম খননের ওপর এক্ষুনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ কর।
৪) পরমাণু বিদ্যুৎ কার্যক্রম সম্পর্কে সমস্ত তথ্য প্রকাশ কর।
৫) অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসিতার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাই এবং বিদ্যুৎ বন্টনে সমতা চাই।
৬) ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং মুনাফাবাজি না করে জন-ভাগীদারির মাধ্যমে দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ শক্তির বিকাশ চাই।
এই প্রতিবাদ ও দাবিসমূহে নিম্নলিখিত দলসমূহ উপস্থিত ছিল :
চুটকা পরমাণু সংঘর্ষ সমিতি (মধ্যপ্রদেশ), জন সঙ্ঘর্ষ মোর্চা (মধ্যপ্রদেশ), কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী লেনিনবাদী (মধ্যপ্রদেশ), পিপলস ইনিশিয়েটিভ এগেইন্সট নিউক্লিয়ার পাওয়ার, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (মধ্য প্রদেশ), অখিল ভারতীয় ক্রান্তিকারী বিদ্যার্থী সংগঠন (মধ্য প্রদেশ), গ্যাস পীড়িত মহিলা উদ্যোগ সংগঠন (ভোপাল), মধ্যপ্রদেশ মহিলা মঞ্চ, শিক্ষা অধিকার মঞ্চ (ভোপাল), ওমেন্স এগেইন্সট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স এন্ড স্টেট রিপ্রেশন (মধ্যপ্রদেশ)।
Leave a Reply