অমিত মাহাতো, ঝাড়গ্রাম, ২৯ এপ্রিল#
বৈশাখের শুরুতেই খড়গপুর টাটা ডিভিশনের স্টেশন লাগোয়া জঙ্গলঘেঁষা শুকনো ডাহির গ্রামগুলো এখন রাত থাকতে উঠে পড়ছে। তাড়াহুড়োতে আলুসেদ্ধ ভাত গামছায় বেঁধে ভোররাতে চারটে চল্লিশের ডিএম লোকাল ধরতে দৌড় লাগায়। বৈশাখ মাস পড়ার সাথে সাথেই শুরু হয়েছে ধানকাটার মরশুম। এবং শুরু হয়েছে নামালের পথে কালো মানুষের কাস্তের কেরামতি। খড়গপুর স্টেশনে যে কেউ হাওড়াগামী ছ-টা পাঁচের লোকালে কিংবা বিকেলে তিনটা পনেরোর টাটা লোকাল ধরবে এসে কালো মানুষগুলোর সাথে সস্তার শাড়ি পড়া মেয়ে বউদের দেখে প্রশ্ন করতেই পারে, এদের অভিমুখ কোনদিকে বা এরা কোথায় যাবে? কলকাতার মিছিল না তো? ঠিক ধরেছেন। ক-বছর আগেও কাস্তে হাতুড়ির বাবুদের অঙ্গুলিহেলনে এরাই তো কলকাতার কালো রাজপথ ভরাতে দৌড়ত। এরা যে প্রকৃতই কাস্তে ধরা শ্রমজীবী শ্রেণীর। খাটলে ভাত, নইলে উপোস।
বৈশাখ মাস পড়তেই সেই রাকা মাইনস আসনবুনি প্রভৃতি গ্রাম থেকে এপারের বাঁশতলা সরডিহা পর্যন্ত কাতারে কাতারে কাস্তে চালানো মানুষ নামালগামী ভোরের ডিএম ধরে খড়্গপুরে জমা হয়। তারপর মাধপুর, যকপুর, শ্যামচক, বালিচক প্রভৃতি স্টেশনে নামে। এবং সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে ধানকাটার কাজ শুরু করে দেয়। টানা দেড়টা অবধি কাজ করে মজুরি নিয়ে বাড়িমুখো হয় দৌড়োতে দৌড়োতে। মজুরি অবশ্য কম না। প্রতিদিন দুশো টাকা। গাড়ি ভাড়ার জন্য কেউ কেউ দশ টাকা অতিরিক্ত দেয়। তাতে মুড়ি কাঁচালঙ্কা। স্বামী স্ত্রী জোড়ায় কাজ করলে কুড়ি পঁচিশ দিনের ধানকাটার মরশুমে আট থেকে দশ হাজার টাকা ঘরে আনতে পারবে। বাকি দিন তো জঙ্গলে শালপাতা রয়েছে। সেখান থেকে গড়ে পঞ্চাশ টাকা আয় হবে বাকি দিনগুলোয়।
Leave a Reply