অলোক সরদার ও গৌর মন্ডল, জয়নগর, ১১ আগস্ট#
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চল থেকে রেশন দোকানগুলির বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ্যদিন ধরেই নানান অভিযোগ পাচ্ছিলাম গ্রাহকদের পক্ষ থেকে। গত ১১ আগষ্ট ২০১৩ আমরা সরেজমিন তদন্তের জন্য উপস্থিত হই । সুন্দরবন অঞ্চলের একমাত্র পৌরসভা জয়নগর -মজিলপুরের শতাধিক বছরের পুরনো বড় বাজার গঞ্জে। তখন সকাল ১০টা বাজে, শনিবার। স্থানীয় মানুষদের থেকে জানা গেল, সোম ও শুক্রবার হাটের দিন ছাড়া রাস্তার দক্ষিণ দিকের অংশটি ফাঁকাই থাকে। উত্তর দিকের সবজী ও মাছ বাজারে তখন কিন্তু খুব ভীড়।
প্রথমে আমরা উত্তর প্রান্তের একটি রেশন দোকানের সামনে উপস্থিত হলাম। গ্রাহকদের থেকে জানা গেল, এটির মালিক স্থানীয় তাপস মতিলাল। রেশন দেওয়ার কাজ করেন স্থানীয় খোকন চক্রবর্তী নামে এক ব্যাক্তি। জনৈক মহিলাকে রেশন দোকান থেক বেরোতে দেখে তাঁর কাছেই আমাদের আসার উদ্দেশ্য জানিয়ে প্রশ্ন রাখলাম। তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে আমাদের জানালেন—
আমার অন্ত্যদয়ের লাল কার্ড আছে সপ্তাহে ১কিলো চাল ২ টাকা দরে আর ৭৫০ গ্রাম গম ২ টাকা দরে পাই কিন্তু আজ আমাকে বলা হল ছোলা ও ময়দা না নিলে ওই সামান্য চাল গমও দেওয়া হবেনা।আমি দেখলাম ছোলা ও ময়দা নিম্নমানের আর তা ছাড়া আমার দরকারও নেই। তাই আমি নেবোনা বলাতে আমাকে চাল গম দেয়নি, (খালি থলে আমাদের দেখিয়ে তিনি বললেন) আমি ফিরে যাচ্ছি। এগুলো অসহায় সাধারণ মানুষের প্রতি জুলুম নয় কি? মাঝে মাঝে বলা হয়, খাতা পেন নিতে হবে আমাদের। ওসব প্রয়োজন লাগেনা কিন্তু না নিলে চাল গম দেয় না। যে মাসে পঞ্চম সপ্তাহ পরে, তখন রেশন দেওয়া হয়না আমাদের সে সপ্তাহের। কোনো কিছু জিঞ্জাসা করলে উত্তর পাওয়া যায় না বা অপমানজনক কথা বলে।
এই অভিঞ্জতা সম্বল করে আমরা কাছেই আর একটি রেশন দোকানের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগোলাম। এই দোকানটির মালিক স্থানীয় সুধীন দাস বলে জানা গেল গ্রাহকদের কাছ থেকে। এখানেও গ্রাহকদের কাছ থেকে একই ধরনের নানা অভিযোগ পেলাম।
জানতে চাইলাম রেশন ইন্সপেক্টররা পরিদর্শনে আসেন কিনা এবং আসলে গ্রাহকরা তাঁদের কাছে অভিযোগ জানাননা কেন? একজন গ্রাহক এর উত্তরে জানালেন, —
প্রায় তিন চার মাস আগে একবার কয়েকজন ইন্সপেক্টর এসেছিলেন পরিদর্শনে তখন কি করে যেন খবর পেয়ে প্রায় সব রেশন দোকান মালিকেরা হিসেবের খাতাপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছিল। পরিদর্শকরা হিসেবপত্র ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখার সুযোগি পাননি। কয়েকজন তাঁদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তার শাস্তি হিসেবে তাঁদের দু-সপ্তাহ রেশন দেওয়া হয়নি। মালিককে বলায় মালিক বলেছিলেন, ‘যে বাবার কাছে তোমরা অভিযোগ জানিয়েছ সেই বাবারা রেশন দেবে তোমাদের।’
কথা বলে জানা গেল আরও অন্যান্য অঞ্চলের রেশন দোকান সম্বন্ধেও মানুষের নানা অভিযোগ থাকা সত্বেও ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড ক্ষোভে ফুঁসলেও ভয়ে তারা কিছু বলতে সাহস করেননা। স্থানীয় কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্য/সদস্যাকে বলেও খুব একটা কাজ হয়নি বলেই তাঁরা জানালেন।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গ্রাম সমাজ ফেটে পড়েছিল ডিলারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রেশন-বিদ্রোহে।
Leave a Reply