সন্দীপ পাণ্ডের বিজ্ঞপ্তি থেকে, ২৫ এপ্রিল#
উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সোসালিস্ট পার্টি (ইন্ডিয়া)-র গোবর্ধন গোন্দ। প্রথমে কুশিনগরের জেলাশাসক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন? কোত্থেকে টাকা জোগাড় করলেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, সোসালিস্ট পার্টির তিনি নামই শোনেননি। কেউ অবাক হতে পারে, আইএএস পরীক্ষা দেওয়ার সময় যে সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হয় তা কি ভুলে গেছেন? যখন তিনি দেখলেন গোবর্ধন অনড়, তিনি তাঁর উকিল উদয় ভান যাদবকে ডাকলেন এবং তাঁকে বললেন গোবর্ধন যাতে না দাঁড়ায় তার জন্য বোঝাতে। জেলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কি এই ভূমিকা নেওয়া উচিত? এটা কি পুরোটাই গোবর্ধন কেন এমন একটা লড়াই-এ নামছে যেটাতে সে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতেই পারবে না — এই দুশ্চিন্তা থেকে? নাকি অন্য কোনো বাইরের কারণে প্রশাসক মহোদয় তাঁর যা করণীয় নয় সেই কাজটি করলেন এক্ষেত্রে? এই কাজটাই কি তিনি কোনো আগ্রাসী প্রার্থী বা বড়ো দলের প্রার্থীর ক্ষেত্রে করতে পারতেন?
কানপুর থেকে শঙ্কর সিং-এর মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন পত্রের একটা জায়গায়, যেখানে হ্যাঁ অথবা না লেখার কথা, সেখানে তিনি ড্যাশ দিয়েছিলেন। মনে হচ্ছে লখনৌ বা কানপুরের মতো বড়ো শহরে নির্বাচন কমিশন প্রচুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে। যাতে তাদের দুটির বেশি ভোটিং মেশিনের বন্দোবস্ত করতে না হয়। তার মানে দাঁড়ায়, নির্বাচন কমিশন কোনও একটি কেন্দ্রে ৩২টির বেশি প্রার্থী দাঁড়াক, তা চায় না। তাই আগেই ধরে নেওয়া হয়েছে, নির্দল বা ছোটো দলগুলির কিছু প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে। অন্য দিকে, আধিকারিকদের সাহায্য করতে দেখা গেছে বড়ো পার্টির প্রার্থীদের, মনোনয়ন পত্রের ফর্ম পূরণ করা বা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে। ছোটোখাটো ভুলগুলো তারা ঠিক করে দিয়েছে নিজেরাই।
এবারে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ফি ছিল ২৫ হাজার টাকা। একজন সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের পক্ষে এই টাকা জোগাড় করতে গেলে ধার করতে হয়, বা অনুদান নিতে হয় সম্পদশালী কারোর কাছ থেকে, বা নিজের সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়। প্রচারের জন্য একজন প্রার্থী কত ব্যয় করতে পারবে তার ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করা হয়েছে ৭০ লক্ষ টাকা। একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে এটা ভীষণ ভীষণ বেশি। এমনকী এক লক্ষ টাকাই খুব বেশি।
নির্বাচন হয়ে দাঁড়িয়েছে বড়ো বড়ো পার্টির টাকা খরচ করার খেলা। প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের খরচের ওপর ঊর্ধ্বসীমা আছে, কিন্তু পার্টির খরচের ওপর নেই। তাই পার্টিগুলি যতখুশি খরচ করতে পারে। নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের আচরণবিধি তৈরি করে দিলেও খোলাখুলি তা ভাঙছে বড়ো বড়ো দলগুলি বা শক্তিশালী প্রার্থীরা। এই খেলায় ছোটো দলগুলির প্রার্থীদের বা নির্দলদের এমনকী টিঁকে থাকাই দুষ্কর হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কেবল বড়োলোক প্রার্থীরাই দাঁড়াক, এমনটাই চাইছে। ছোটো বা গরিব দলগুলি থেকে কেউ দাঁড়াক, তা প্রশাসন চাইছে না। এটা গণতন্ত্রের ভাবধারার বিরোধী।
Leave a Reply