কামরুজ্জামান খান, মেছেদা, ২৩ মে#
মেছেদা আর কোলাঘাটের মানুষ ছাই আর দূষিত জলের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে দিন দিন। মেছেদার বুকে আছে কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার স্টেশন, যা থেকে ক্রমাগত ছ-টি চিমনি দিয়ে ধোঁয়া এবং বিষাক্ত ছাইয়ের গুঁড়ো উঠে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। কয়লা এবং রাসায়নিক কেমিকালের দূষিত বর্জ্য মেশিনে কেটে ট্রাক ভরতি করে জমি ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ৭০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে। তার জেরে এলাকা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পুকুর, খাল, বিল, নদী, নালার জল দূষিত হচ্ছে দিন দিন। এর ফলে মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, চর্মরোগ হৃদরোগ লেগেই আছে, মেছেদা, কোলাঘাটবাসীর।
এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী শামসুজ্জামান খান বলেন, মেছেদা থার্মাল গেট থেকে কেটিপিপি (কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র) টাউনশিপ পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক সব সময় কালো ছাইয়ের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে থাকে। তিনি বলেন, প্রতিদিন এক হাজার ট্রাক ছাই এবং সিমেন্ট তোলার কাজে নিয়োজিত থাকে। ওই রাস্তার ধারে মানুষ যাতায়াতের কোনো জায়গা না থাকার জন্য আশপাশের সমস্ত মানুষ এবং স্কুল ছাত্রছাত্রীদের ওই ৪১ নম্বর রাস্তার ওপর দিয়েই আসতে হয়। ফলে ধুলো, ছাই ও ধোঁয়ায় গোটা শরীর ভরে যায়।
এলাকার আর এক বিশিষ্ট সমাজসেবী বাবলা মাইতির কথায় ‘আমি তিরিশ বছর ধরে আমার বাড়ি থেকে ওই পথ ধরে সাইকেলে মেছেদা আসি এবং যাই। এমন ধোঁয়া ধুলো আর ছাই যে সাইকেল, মোটর সাইকেলে করে যাতায়াত করা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রেকারে বা বাসে করে গেলেও গোটা গায়ে ছাইয়ের ধুলো মেখে যায়। এমন ছাইয়ের দাপটের ওপর কালবৈশাখীর ঝড় উঠলে তো কথাই নেই। প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা এবং পাড়া এলাকা ছাইয়ের দাপটে চলে যায় এবং বাড়ি ঘর গাছপালায় প্রায় ১ থেকে ২ ইঞ্চি ছাইয়ের আস্তরণ পড়ে যায়।’
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন্দোলন করে অথচ থার্মাল কর্তৃপক্ষের কোনো হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে হাইকোর্টে মামলা করে। থার্মাল কর্তৃপক্ষকে তিরস্কার করে হাইকোর্ট। সঙ্গে ২ লক্ষ টাকা জরিমানাও করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং জ্বলে পুড়ে ছাই খেয়ে মরে এলাকার মানুষ। এর ফলে চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফুল চাষ, পান চাষ, ধান চাষ, এমনকী মাছ চাষেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান ডাঃ অভিজিৎ জানা।
Leave a Reply