ভারতবর্ষের হিন্দিভাষী হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূজা ছট্ পূজা। ছট্ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজা। এই রশ্মি সূর্য থেকেই পৃথিবীর বুকে আসে। সুতরাং এই পূজা আসলে সূর্যদেবের পূজা। প্রত্যক্ষভাবে ‘ছট;-এর পূজা হলেও এই পূজার সঙ্গে জড়িত আছেন স্বয়ং সূর্যদেব, আছেন মা গঙ্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণা। …
পৌরাণিক কাহিনিতে রয়েছে — বর্ষার আগমন ঘটেছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হয়নি। চাষিদের মাথায় হাত। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে। মা অন্নপূর্ণা ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকেন। সকল দেবতা মা অন্নপূর্ণার এহেন দুর্দশায় ব্যথিত। ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে। সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। এবং বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, অস্তগমনকালে গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে এবং সপ্তমীর উদয়কালে মা অন্নপূর্ণা গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা ১২টি নাম উচ্চারণ করলে আমার স্মরণকারীকে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পূর্ণ হতে থাকল। মা অন্নপূর্ণা আবার তাঁর শ্রী ফিরে পান।
তাই ছট্ পূজা বা ব্রত একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পূজা। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলা যায়, গঙ্গার জলে সেচ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে অনাবৃষ্টিতেও খেত-খামার অন্নে পূর্ণ হয় এবং স্বাভাবিকভাবে মনুষ্যসমাজে খাওয়া-পরার অভাব থাকে না। এই ব্রত পালনে সূর্যদেবের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি আমাদের জীবনে যেমন বিঘ্ননাশক, দুঃখনাশক, তেমনি সুখদায়ক ও অর্থ-বৈভবদায়ক।
‘বাংলার সমৃদ্ধ অঙ্গন’ পত্রিকাটির সপ্তম বর্ষ, অষ্টম সংখ্যায় শৈলজানন্দ সামন্তের ‘ছট্ পূজা’ লেখাটির অংশ এখানে প্রকাশ করা হল। মুদিয়ালী, গার্ডেনরীচ থেকে হৃষীকেশ পালের সম্পাদনায় এই পত্রিকাটি প্রকাশ হয়ে চলেছে সাত বছর ধরে। দূরভাষ : ২৪৬৯-৬৩০১ এবং ৯৯০৩১৭১০০৮।
Leave a Reply