রামজীবন ভৌমিক ও শঙ্খজিৎ দাস, ২৮ ডিসেম্বর#
বারবিশা থেকে কুমারগ্রাম যাওয়ার তিন কিমি আগে রাস্তার পাশে বাঁ দিকে চেংমারি শরণার্থী শিবির। সুবচনী সঙ্ঘ ও সুকান্ত এমএসকে বিদ্যালয় মিলিয়ে এই শিবির। এই ক্যাম্পের সুবচনী সঙ্ঘ শিবিরে রবিচাঁদ টুডু এসেছে বিন্নাবাড়ি থেকে। সে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তার কথা-
‘আমরা এখানে চ্যাংমারি ক্যাম্পে ৪টে গ্রামের মানুষ আছই। বেতবাড়ি শালবাড়ি বিন্নাবাড়ি ও শিমলাবাড়ি। আমরা ২৪ তারিখ রাতে আসছি। নদী পার হয়ে ফরেস্ট পার হয়ে আসছি। আমরা জানি যে আমাদের সবকে মরতে হবে। তাই জীবনটাকে বাঁচা যাবে জন্য আমরা সবাই পালাইছি। এখানে আমার মা আছে, বাবা কোথায় আছে বলতে পারব না। আমার পাশে এক কিলোমিটার দূরে কামারপাড়া।, হাকমা সিরফাং গুড়ি ও দোবরা গাও উগ্রপন্থীরা ঘেরাও নিছে। লোকগুলাক মারছে। ঘরগুলাক জ্বালাও দিছে। এখানে একজন লোক আছে ওয়ার মেয়ে মারা গেছে না কি হইছে জানা যাইছে না। খোঁজটা এখনো পায় নাই। আমি এবার হাই সেকেন্ডারি এক্সাম । এখন এত হুলুস্থুল হইল এক্সাম দিতে পারব না। এখানে আমার মত অনেকগুলা ছেলে আছে মেয়ে আছে। এরাও এক্সাম দিতে পারবে না। আমরা কোন বইপত্র আনতে পারি নাই। কিছু কাপড়জামা আর ডকুমেন্টস নিয়া আইছি। আর কিছু আনতে পারি নাই। সুমি… ওই সুমি… (ডাক)। সুমি হেমব্রম ও হাই সেকেন্ডারি এক্সাম দিতে পারবে না। শিমলাবাড়ি সুমির বাড়ি। ওয়ার মা ভাই বহিন আছে এই ক্যাম্পে। ওয়ার বাবা ৯৬এর দাঙ্গায় জঙ্গি মারি ফেলিছে। সুমি বাড়ির ছাগল মুরগির জন্য কষ্ট পাইছে। জমিতে মুসরির ডাল আছে, তিল আছে। আমরা কেউ যাইতে পাচ্ছে না।’
হলদিবাড়ি শরণার্থী শিবিরে ফুলকুমারির বাসিন্দা ২০ বছর বয়স্ক সিবেশ মুর্মু বললেন, ‘মা বাবা আমাদের দিকে আইসে নাই। আমরা একই পাড়ায় থাকি। আমার দিদি লাগে। মা বাবা কোন দিকে গেইছে। আমরা একদিকে গেইছি। এখন যোগাযোগ হইছে। মা বাবা আসামের গোসাই গাও পুখরিপাড়া ক্যাম্পে আছে। আমরা এখানে রেশন পাইছি। মা-বাবা এখন রেশন পায় নাই। পঁচিশ তারিখ মা বাবা সকালবেলা গোসাইগাও সিটি (?) মধ্যে ঢুকছে। আমরা তখন বাড়িতে ছিলাম না। আমরা বাড়ি আসি দেখি মা-বাবা নাই। আমরা তখন উপরে তো যাইতে পারব না। তখন (নিচে) বেঙ্গলে আইসি। রাতের বেলা জঙ্গলে থাকসি। ছাব্বিশ তারিখে এখানে ক্যাম্পে আইসি।’
একটি ভিডিও :
চেংমারি শরণার্থী শিবিরে কথোপকথন
Leave a Reply