শমিত আচার্য, শান্তিপুর, ১২ মার্চ
#
প্রায় মাস খানেক ধরে চূর্ণী নদীর জল নর্দমার জলের মতো মিস মিসে কালো থাকার পর আবার স্বাভাবিক চেহারায় ফিরছে। আর তাতেই কিছু কিছু মানুষের মধ্যে আবার উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে কিছুদিনের মধ্যেই আবারও নোংরা তৈলাক্ত বর্জ্য পদার্থে চূর্ণীর জল কালো ও দূষিত হয়ে পড়বে। নদীকে চিরস্থায়ী দূষণমুক্ত করার প্রচেষ্টা যে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়া দরকার সাধারণ মানূষ তা উপলব্ধি করেছে।
বাংলাদেশের একটি চিনিকলের নোংরা জল ও বর্জ্য বহুদিন ধরেই মাথাভাঙা নদীতে পড়ছে। মাথাভাঙা নদী নদিয়ার মাজদিয়াতে এসে চূর্ণী নদীতে মিশছে, আবার চূর্ণী নদী পায়রাডাঙ্গাতে গিয়ে গঙ্গার সঙ্গে মিলেছে। সুতরাং ওই নোংরা বর্জ্য সরাসরি তিনটি নদীকে দূষিত ও কলুষিত করছে। অথচ স্টকহোম ঘোষণাকে স্বীকৃতি দিয়েই দূষণ সংক্রান্ত আইন রচনার বাস্তব ভিত্তি তৈরি হয় আমাদের দেশে। জল দূষণরোধের জন্য আইন ১৯৭৪ ও পরিবেশ দূষণ সুরক্ষা আইন ১৯৮৬-ও তৈরি করা হয়। জল দূষণরোধের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত নোংরা জল ক্ষতিকর তরল বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত করতে প্রতিটি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধনাগার বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাতে নির্দেশ দেয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সরকারকে দেখতে হবে সেই নির্দেশ প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি কার্যকর করছে কিনা। পরিশোধনাগার বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলি ঠিকমতো চালানো হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় শেষ পর্যন্ত জল দূষণরোধে কার্যত কিছুই হয়নি। বেশিরভাগ শিল্পকারখানায় পরিশোধনাগার নেই, নালা নর্দমার জল সরাসরি নদীতে ও জলাশয়গুলিতে পড়ছে। চিনিকলের বর্জ্য ৫৪ কিমি ব্যাপী চূর্ণী নদীতে পড়ছে। এখন দেখা যাচ্ছে বছরে তিন থেকে চারবার এই বর্জ্য নদীটিকে দূষিত করছে। ফলে দীর্ঘ এই নদীটির জলজ প্রাণী ও মাছ মরে ভেসে উঠছে। মারাত্মক দুর্গন্ধ নদীর জলের মধ্যে থেকে আসায় আশেপাশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। জানা গেছে রানাঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে কলকাতা হাইকোর্টে। গত ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে চূর্ণী নদীর ৫৪ কিমি পথ দূষণমুক্ত করতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদকে নির্দেশ দেয়। অথচ রাজ্য দূষণনিয়ন্ত্রক পর্ষদ এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলকে বিষয়টি অবহিত করে চূর্ণী নদীকে দূষণমুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Leave a Reply