শমীক সরকার, কলকাতা, ৩০ মার্চ, তথ্য সূত্র উইকিপিডিয়া, সহায়তা বর্ণালি চন্দ#
চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ফের একবার ঘুরে দাঁড়ালো তাইওয়ানের ছাত্ররা। সংসদ ভবনই ‘দখল’ করে নিল, ইতিহাসে প্রথমবার।
১৭ মার্চ তাইওয়ানের শাসক দল কুয়ো-মিন-টাঙ সরকার চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে সিলমোহর দেয়। এই বাণিজ্য চুক্তি, ‘ক্রস স্ট্রেট সার্ভিস ট্রেড এগ্রিমেন্ট’-এর মাধ্যমে চীনা পুঁজি তাইওয়ানের ৬৪টি ক্ষেত্রে এবং তাইওয়ানি পুঁজি চীনের ৮০ টি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে বিনা বাধায়। তাইওয়ানের ৬৪টি ক্ষেত্রের মধ্যে আছে যোগাযোগ, টেলিকম, খুচরো, পাইকারি, ক্যুরিয়ার, প্যাকেজিং, বিজ্ঞান, হাসপাতাল, বিউটি পার্লার প্রভৃতি। যার মাধ্যমে তাইওয়ানের রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ছোটো ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রগুলিও চীনের দানবাকার কর্পোরেটদের কাছে খুলে যাচ্ছে। ফলে তাইওয়ানে চীনা পুঁজি এবং চীনা জনগোষ্ঠীর আধিপত্য নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা। উল্লেখ্য, তিব্বত, উইঘুর প্রভৃতি এলাকায় চীনা জনগোষ্ঠী (হান) গুলির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই জায়গাগুলি দখল করে নেওয়ার চীনা কায়দা সম্পর্কে তার প্রতিবেশী দেশগুলি খুবই সংবেদনশীল।
এই চুক্তিটি একটু এদিক ওদিক করে লাগু করার ব্যাপারে মাস আটেক আগে সম্মত হয়েছিল তাইওয়ানের বিরোধী দল। কিন্তু মূল ভূ-খণ্ড চীনের ‘চাপে’ শাসক দল একফোঁটাও এদিক ওদিক করতে রাজি হয়নি।
১৮ মার্চ সকাল ন’টার সময় তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র, শিক্ষক, সমাজকর্মীরা সেদেশের সংসদ ‘দখল’ করে। প্রায় তিনশ’ জন সেদিন রাত্রিবেলা সংসদের মধ্যে ঢুকে পড়ে, বাকিরা বাইরেই থাকে। যারা ভেতরে ঢুকেছিল, তারা জানিয়ে দেয়, এই চুক্তির ব্যাপারে ভোটাভুটি হওয়ার কথা আছে ২১ মার্চ, সেদিন অবধি তারা সংসদ ‘দখল’ করে থাকবে। কয়েক হাজার নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হলেও ছাত্রদের ওপর তারা চড়াও হয়নি। সংসদের স্পিকার প্রধানমন্ত্রী চিয়াং এবং রাষ্ট্রপতি মা-কে বলেন, প্রতিবাদীদের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসায় আসতে। চিয়াং তার নিজের অবস্থানে অনড় থেকে জানায়, প্রশাসনিক স্তরে চুক্তি লাগু শুরু হচ্ছে। এই ঘোষণার পরই ২৩ মার্চ সন্ধ্যেবেলা প্রতিবাদীদের একটা অংশ গিয়ে প্রশাসনিক ভবন ‘দখল’ করে নেয়। পরদিন প্রায় দশঘন্টা ধরে পিটিয়ে, জলকামান চালিয়ে প্রশাসনিক ভবন দখল মুক্ত করে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী। ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাষ্ট্রপতি মা এই সময় চেষ্টা করেন ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করার, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। ছাত্ররা ২৬ মার্চ একটি ঘোষণাপত্র বানিয়ে তাতে সমস্ত জনপ্রতিনিধিকে সই করার ডাক দেয়। সেই ঘোষণাপত্রে, চীনের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় যাওয়ার আগে কি কি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে, তার আইন তৈরির কথা ছিল। বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিরা এই ঘোষণাপত্রে সই করে।
৩০ মার্চ কেতাগালান বুলভার্দ থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন অবধি একটি বিশাল মিছিল হয় ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্বে। সংগঠকদের মতে, সেটায় প্রায় পাঁচ লক্ষ লোক জমায়েত হয়েছিল, পুলিশের হিসেবে সংখ্যাটা এক লক্ষ ষাট হাজার। ওইদিনই কয়েকশ’ লোক পাশেই জমায়েত করে এই চুক্তির সপক্ষে।
চীনা পুঁজি ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই ছাত্র আন্দোলনকে কেউ ডাকছে ‘সূর্যমুখী আন্দোলন’ বলে। উল্লেখ্য, ১৯৯০ তে তাইওয়ানের গণতন্ত্রীকরণের সপক্ষে আন্দোলনটির নাম ছিল ‘বুনো লিলি আন্দোলন’। অনেকে অবশ্য আজকের আন্দোলনের নাম দিয়েছে, ‘তাইওয়ান সংসদ দখল’ আন্দোলন।
jogin says
firstly i found it difficult to read as the word formation was poor in your message. then i copied it in word file and found it clearly readable. great news.