সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ২৯ এপ্রিল#
১৯৭১ সালে ভারতের ব্যাঙ্কিং কমিশনের নিযুক্ত একটি স্টাডি গ্রুপ নন-ব্যাঙ্কিং ফাইনান্সিয়াল ইন্টারমিডিয়ারিস নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। সেখানে চিট ফান্ড নিয়ে বলা আছে।
‘চিট ফান্ড হয়ত বা ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরনো নিজস্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ ভারতের গ্রামগুলিতে শতাধিক বছর আগে চিট্টি, কুরি বা চিট ফান্ডের খোঁজ পাওয়া যায়। সময়ে সময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল একজন বিশ্বস্ত লোকের হাতে জমা রাখত লোকে। তাকি?রপর যখন অনেকটা শস্য এভাবে জমা হয়ে গেছে তখন তা ফেরত নেওয়া হত। যার দরকার সে লটারির মাধ্যমে অনেকটা শস্য ধার হিসেবে পেত। চিট কথাটার মধ্যেই এই ব্যবস্থার সূত্র লুকিয়ে আছে। চিট মানে হল একটি লিখিত নোট। চিটের বিজেতা যেহেতু লটারির মাধ্যমে ঠিক হত, তাই তা করার জন্য আলাদা আলাদা কাগজে সব সদস্যের নাম লেখা হত, যেমন লেখা হয় লটারিতে। এই ব্যবস্থাটি তাই চিট ফান্ড হিসেবে খ্যাতি পায়। মালয়ালম ভাষায় এই চিটের সমার্থক শব্দ কুরিপ্পু, তার থেকে এসেছে কুরি। বিশ্বস্ত ব্যক্তি — যার কাছে জমা রাখা হচ্ছে ফসলাদি, তার সততার ওপর ভর করে আরও বেশি বেশি লোক তার কাছেই জমা রাখত। প্রথম দিকে যখন আধুনিক ব্যাঙ্কিং মানুষের কাছে পৌঁছয়নি, চিট ফাণ্ড তখন খুব দ্রুত প্রসার লাভ করে, এবং স্বতস্ফুর্তভাবেই। সমবায়িক উদ্যোগে সঞ্চিত অর্থ ধাপে ধাপে জমা করা এবং সেই সঞ্চিত অর্থ থেকে যার প্রয়োজন তাকে ধার দেওয়া, এবং সেই ধার ধাপে ধাপে ফেরত নেওয়া। গ্রামে উদ্ভব হওয়া এই ব্যবস্থা সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্য এবং শিল্পের বিস্তারের সঙ্গে এবং শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিক জীবনেও চলে আসে।’
ওই একই রিপোর্টে ব্যবসায়িক চিট বা প্রাইজ চিটের কথাও পাওয়া যায় —
‘এই ক্ষেত্রে একজন প্রোমোটার, যাকে ফোরম্যান বলে ডাকা হয়, সে বেশ কিছু গ্রাহককে নথিভুক্ত করে এবং তাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। প্রতিটি গ্রাহককে নিয়মিত ইনস্টলমেন্টে তার প্রদেয় টাকা দিয়ে দিতে হয় ফোরম্যানকে। ফোরম্যান তার এই কাজের জন্য কমিশন নেয়, কিছু রাজ্যে এই কমিশনের পরিমাণ আইন করে ঠিক করে দেওয়া আছে। সেই ফোরম্যানের আরও অধিকার থাকে, প্রথম বা দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্টের টাকা পুরোটাই প্রাইজ হিসেবে নিজে নিয়ে নেওয়ার। যারা প্রাইজ পেল না, তাদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেওয়ার জন্য অনেক সময় একটা পরিমাণ টাকা সরিয়ে রাখার কথাও চুক্তিতে বলা থাকে। এসব বাদ যাবার পর করার পর বাকিটা নিলামে তোলা হয় (একদম শেষ ইনস্টলমেন্টটা বাদ দিয়ে)। এবং যে সেই টাকা ধার হিসেবে নিয়ে, তার ওপর সবচেয়ে বেশি সুদ দিয়ে শোধ দেবে বলে নিলামে ডাক দেয়, তাকে সেই টাকা পুরষ্কার হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়। এই বাড়তি টাকা বা সুদটি হয় সমস্ত সদস্যের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেওয়া হয়, বা যারা প্রাইজ পায়নি, তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় ডিভিডেন্ড হিসেবে। কিছু কিছু রাজ্যে এই সুদের সর্বোচ্চ সীমা বলে দেওয়া আছে আইন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি একাধিক লোক সম পরিমাণ সুদ দিতে চায়, বা কোনও দর হাঁকার লোক না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে এই পুরষ্কারটি তখনকার মতো কে পাবে তা ঠিক করা হয়। একটা চিটে যতজন গ্রাহক, ততগুলির ইনস্টলমেন্ট, যাতে প্রত্যেকে একবার করে পুরষ্কার অর্থ জিতে নেওয়ার সুযোগ পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু নিলাম হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিলাম ও লটারি দুটোই হয়। পুরষ্কার বিজেতা সেই পুরষ্কারের টাকা তখনই পাবে, যখন সে একটা পরিমাণ টাকা ফোরম্যানের কাছে জমা রাখে, নিরাপত্তার খাতিরে। যদি কোনও পুরষ্কার পাওয়া সদস্য নির্দিষ্ট দিনে ইনস্টলমেন্টের টাকা শোধ না দিতে পারে, সেক্ষেত্রে তার শাস্তি হয় বিভিন্নভাবে, তার ডিভিডেন্ডগুলি বাজেয়াপ্ত করে বা আর্থিক জরিমানার মাধ্যমে। এগুলি একটি বিজনেস চিটের আবশ্যক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এর বিভিন্ন ধরণ আছে।’
Leave a Reply