কুশল বসু, কলকাতা, ১৬ আগস্ট, সূত্র : উইকিপিডিয়া, গার্জিয়ান, সিএনএন#
১২ আগস্ট কেমিক্যাল হাবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বন্দর শহর থিয়ানচিন বিস্ফোরক বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত সাতশো জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই রুইহাই লজিস্টিক্স কেমিক্যাল হাবের শ্রমিক এবং দমকলকর্মী। তিরিশ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি বড়ো বড়ো বিস্ফোরণ ঘটার পর দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে আগুন নেভাতে যায় এবং জল ব্যবহার করে। কিন্তু ওই কেমিক্যাল হাবে ছিল সোডিয়াম কার্বাইড সহ এমন কিছু রাসায়নিক, যা জলের সংস্পর্শে জ্বলে ওঠে। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের তরফে দমকল কর্মীদেরই দোষারোপ করা হয়, কেমিক্যাল হাবের আগুন নেভাতে জল ব্যবহার করার নির্বুদ্ধিতা দেখানোর জন্য। উল্লেখ্য, এই রুইহাই লজিস্টিক্স বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে নাড়াচাড়া করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোম্পানি বলে পরিচিত।
চিনের সরকার প্রথম থেকেই খবর চাপতে শুরু করে। ইন্টারনেটে চিনা ভাষায় এবং চিন দেশের সার্ভার থেকে থিয়ানচিন এবং বিস্ফোরণ নিয়ে কোনো কিছু খোঁজা কার্যত অসম্ভব করে দেওয়া হয়। এলাকায় সাংবাদিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। কতজন মারা গেছে — সে প্রশ্নের জবাবও কোনো প্রমাণ ছাড়াই সরকার একতরফাভাবে জানাতে থাকে। অন্য সূত্র থেকে মৃত ও আহতের সংখ্যা প্রকাশ কার্যত নিষিদ্ধ হয়। চীনের রাষ্ট্রপ্রধান আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে উপদেশ দেন, এরপর থেকে কেমিক্যাল হাবের নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়ে আরো সতর্কতার জন্য। একই সঙ্গে সারা চিনে সমস্ত কেমিক্যাল হাব ও শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আদেশ দেন।
প্রথম বিস্ফোরণের তিনদিন বাদে ফের বিস্ফোরণ ঘটা শুরু হয়। পরপর আটটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে খবর। সাফাইকর্মীরা অকুস্থলে সোডিয়াম সায়ানাইড আবিষ্কার করে যা মানুষের শ্বাসের সঙ্গে দেহের মধ্যে ঢুকে গিয়ে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। ঘটনাটি লোক জানাজানি হতেই অকুস্থলের তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা থেকে মানুষকে সরে যাবার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। মুখে মুখোশ পরে, গায়ে লম্বা পোশাক পরে শহর ছাড়ছে বাসিন্দারা। ঘটনাস্থল থেকে যারা দূরে থাকে, তারাও কল থেকে জল খেতে ভয় পাচ্ছে, পাছে তার মধ্যেও না এই বিষ ঢুকে পড়ে। আপাতত থিয়ানচিন একটি ভুতুড়ে শহরে পর্যবসিত হতে বসেছে — এমনই মত এক বেঁচে যাওয়া শ্রমিকের।
Leave a Reply