শমীক সরকার, চাকদহ, ১৪ জুলাই#
নদীয়া জেলার চাকদা-র তাঁতরা ১ নং এর বাসিন্দা যুবক সুপ্রিয় সিংহ রায় প্রায় ককিয়ে উঠে বললেন, এবার আমাদের এলাকায় কত যে ‘রাউন্ড আপ’ ব্যবহার হয়েছে ঘাস মারার জন্য, তার ঠিক নেই। রাউন্ড আপ একটা মারাত্মক ওষুধ। নিড়ানির জন্য লোক না লাগিয়ে, নিজেরাও নিড়ানি না দিয়ে চাষিরা এই কীটনাশকটি দিয়ে এক লহমায় ঘাস মেরে ফেলছে। অথচ এই ওষুধটির জমি, ফসল এসবকিছুর ওপর প্রভাবই সুদূরপ্রসারী। সুপ্রিয় আরও জানালেন, তাদের গ্রামে মোট তিরিশ বিঘে জমিতে এবার জৈব পদ্ধতিতে দেশি ধানের চাষ হয়েছে। তিনি নিজে দশ বিঘে জমিতে লাগিয়েছেন কালোমুনিয়া, চাউলমনি, রাধাতিলক। যারা চায় জৈব পদ্ধতিতে চষা দেশি ধানের চাল খেতে, তারা সরাসরি সেখান থেকে কিনতে পারে। দাম একটু বেশি, ৬০ টাকা কেজি।
‘চাষে লাভ নেই’ শীর্ষক একটি আলোচনায় ছাত্রছাত্রী, বিজ্ঞানকর্মী এবং চাষীদের সাথে কথোপকথনের ঢঙে আলোচনা হচ্ছিল সার বিষ দিয়ে করা বাণিজ্যিক চাষ করে ডুবতে বসা চাষিসমাজকে নিয়ে। আলোচনা করছিলেন কৃষিবিজ্ঞানী অনুপম পাল। ১৪ জুলাই বিকেলে চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে চাকদা-র পুরাতন বাজারে ঘুগিয়া ভুবনমোহিনী উচ্চবিদ্যালয়ে এই আলোচনায় উঠে এল গ্রাম বাংলার মানুষের নিজেদের গ্রাম, নিজেদের বীজ বৈচিত্র্য, নিজেদের মাটির প্রতি অবহেলার কথা। অনুপমবাবু বারবার এখনকার শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেললেন, যা আমাদের নিজেদের ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দিয়ে কেবল বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে শেখায়। তিনি নিজেদের বীজ-বৈচিত্র্যকে রক্ষা করার ডাক দিলেন। আর যারা চাষি নয়, তারাও নিজেদের বাড়িতে একটু খোলা জায়গায় সব্জি ফলাতে পারে। উপহার দিতে পারে গাছ। চাষের সঙ্কটমোচনে যথাসম্ভব স্থানীয় খাবার খাওয়ার কথাও উঠে এল। কথায় কথায় উঠল কিউবার খাদ্য স্বনির্ভরতার কথা। চাষিরা তো স্বরোজগেরে। প্রশ্ন উঠল, স্বরোজগারের বদলে চাকরির দিকে ঝোঁক কি বিবেচকের কাজ?
সভায় উপস্থিত এক কিশোর চাষি প্রশ্ন করল, দেশজ ধান কেরালাসুন্দরী চাষ করতে গিয়ে যদি মাজরা পোকা হয়, তাহলে আমি কি করব? উত্তরে অনুপমবাবু বললেন, ২-৩ বছর সময় লাগবে। রাসায়নিক সার বিষ দেওয়া কমিয়ে জৈব সার বিষ বাড়িয়ে বাড়িয়ে যেতে হবে। আস্তে আস্তে মাটির জৈব সত্ত্বা ফিরে এলে তারপর আর পোকা লাগবে না। ধৈর্যের প্রয়োজন।
Leave a Reply