অমিতাভ সেন, কলকাতা, ৩০ জানুয়ারি#
পিট সিগার মারা গেলেন গত ২৭শে জানুয়ারি রাতে, ৯৪ বছর বয়সে। প্রবীণ এই আমেরিকান গায়কের নাম দুনিয়ার প্রায় সব দেশের মানুষই কম-বেশি জানে। যারা চেনে না তারা অন্তত তাঁর একটা গান জানে — ‘উই শ্যাল ওভারকাম’। এই গানটাকে গীর্জার ধর্মীয় সঙ্গীত থেকে তুলে এনে লড়াই-আন্দোলনের গানে পরিণত করেছিলেন পিট সিগার সেই ষাটের দশকে।
ওরকমইভাবে বিভিন্ন দেশের এবং আমেরিকান লোকসঙ্গীতকেও জনতার মুখে মুখে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পিট সিগার — জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে প্রতিটা আন্দোলনে উপস্থিত থেকে। তাঁর নিজের কথায়, ‘জনতার কোনো অংশের সঙ্গে আমার মতভেদ থাকলেও তাদেরকে আমার গান শোনাতে আমি কোনোদিন আপত্তি করিনি এবং এর জন্য আমি গর্বিত।’
গানের পথ ধরে পিট সিগারের যাত্রা দীর্ঘদিনের — ১৯৩৮ সালে আব্রাহাম লিঙ্কন ব্রিগেডে তিনি যখন গান গেয়েছেন তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর, আর ২০১১ সালের অক্টোবরে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিটের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ম্যানহাটনে যখন তিনি পদযাত্রায় যোগ দিচ্ছেন তখন তাঁর বয়স ৯১ বছর। শ্রমিকদের বা নাগরিক অধিকারের প্রতিটি আন্দোলন, পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শান্তির দাবিতে প্রতিটা বিষয়ে সাড়া দিয়ে তিনি ছুটে বেরিয়েছেন দেশ থেকে দেশে। আমাদের কলকাতাতেও তিনি এসেছিলেন, গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। তিনি বিশ্বাস করতেন, গান পারে দুনিয়াটাকে পাল্টানোর কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে। \par
১৯৫০-এর দশকেই উইভার্সেদের সঙ্গে গাওয়া তাঁর ‘গুডনাইট আইরিন’ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের রেকর্ড হিসেবে মর্যাদা পেয়েছিল, ২০১৪ সালে গ্রামি পুরস্কারের জন্য তাঁকে বাছা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকা সরকার তাঁকে ভালো চোখে দেখেনি। কম্যুনিস্ট ও স্যোসালিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য ১৯৬১তে তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়। আমেরিকার বিনোদন শিল্পের কর্তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের মন থেকে তাঁকে সরাতে পারেনি। ‘হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ার্স গন্’ (ফুলগুলো সব কোথায় গেল) গানের মতো যুদ্ধবিরোধী গানের স্রষ্টা ‘দিস্ ল্যান্ড ইস ইওর ল্যান্ড’ (এই দেশ তোমার দেশ) গানে লিখেছিলেন, ‘জীয়ন্তে কেউ আমাকে থামাতে পারবে না, কারণ আমি স্বাধীনতার রাজপথ ধরে হেঁটে চলেছি, কেউ আমাকে পিছু হঠাতে পারবে না, এই দেশ তৈরি হয়েছে তোমার জন্য আর আমার জন্য’।
প্রতিষ্ঠিত জীবনকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পিট সিগার বাসা বেঁধেছিলেন তাঁর স্ত্রী তোশির সঙ্গে হাডসন নদীর তীরে একটা ছোটো খুপরিতে। সেখানে না ছিল কলের জল না ছিল বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এই মানুষই পারেন ব্যাঞ্জো তুলে ধরে এই গান গাইতে, ‘এই যন্ত্রটা পারে ঘৃণাকে চারমুখে বেঁধে বশীভূত হতে বাধ্য করতে।’
Leave a Reply