২৮ ফেব্রুয়ারি, আব্দুল আহাদ মোল্লা, রাজাবাগান, মেটিয়াবুরুজ#
পশ্চিমবাংলায় নতুন সরকার গঠন হওয়ার ফলে যেসব পরিবর্তন হয়েছে, তার মধ্যে একটা হল নাগরিক-পুলিশ পরিষেবা। এই রাজ্যে গ্রাম-শহর মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার বেকার যুবক এই কাজে রত। কেউ কলেজে পড়াশুনা করে টিউশনি পড়িয়ে পড়ার খরচ জোগার করে; কেউ হয়তো পড়াশুনা শেষ করে পুরোপুরি বেকার। এক কথায় কিছুটা হলেও বেশ কিছু শিক্ষিত বেকার যুবকের কিছু রোজগারের সংস্থান হয়েছে। তবে আবার নতুন করে সমস্যা তৈরিও হবে। কারণ এই চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। আপাতত ভোট পর্যন্ত মেয়াদ আছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
প্রথমে নাগরিক-পুলিশ চালু করা হয়েছিল মাত্র একমাসের জন্য। তারপর মেয়াদ বাড়িয়ে আরও চারমাস করা হল। মাইনে দিনপ্রতি একশো চল্লিশ টাকা, এখনও তাই আছে। মাসের শেষে ডিউটির খাতা দেখে রোজ হিসেব করে পয়সা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ডিউটি দিলে মাইনে, নইলে কাটা। কিন্তু ভোট ফুরিয়ে গেলে চাকরিও ফুরিয়ে যাবে। প্রিয় সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘বর্ষা ফুরাইয়া গেলে পদ্মা কৃপণ হইয়া যায়’।
নাগরিক-পুলিশের প্রয়োজন কোথায়? প্রধানত গ্রামের নিরাপত্তার জন্য নাগরিক-পুলিশ পরিষেবা। গ্রামে অশান্তি-মারামারি হলে নাগরিক-পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। গ্রামের সুবিধা-অসুবিধা সুশৃঙ্খলভাবে দেখভাল করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে এদের। পুজো গেল, মহরম গেল, সবকিছুতে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব ছিল এদের।
বামফ্রন্টের আমলে ঝামেলা হলে অনেক সময় ইচ্ছেমতো একতরফা অবিচার করে চোখ রাঙিয়ে পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া হত। নাগরিক-পুলিশ থাকলে রাজনৈতিক দাদাদের ‘দাদাগিরি’ উঠে যাবে। শহরের নাগরিক-পুলিশের ইউনিফর্ম আছে। তারা ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। ড্রেস বা ইউনিফর্মের কিছু সুবিধা আছে। গ্রামে তা না থাকায় অনেক সময় তাদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। দু-এক জায়গায় নাগরিক-পুলিশকে পিটিয়ে মেরে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা ঘটেছিল বাঁকুড়া জেলায়। দুর্গাপুরেও একজনের দুর্ঘটনা হয়েছে লরির ধাক্কায়।
এতদিন পর্যন্ত নাগরিক-পুলিশের কাজ করে ছেড়ে দেওয়ার ফলে বেশ অসুবিধা হবে। একটা মানসিক নির্যাতন তো হচ্ছেই — এ আবার কীসের পুলিশ! কাজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর এদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে ভাবতে হবে। কেননা কেউ হয়তো তৈরি হয়েই আছে, চাকরি খতম হলে ব্যাটাকে একবার দেখব!
Leave a Reply