গর্গ চ্যাটার্জি, দিল্লি, ১৮ ডিসেম্বর#
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের কেমব্রিজ শহর থেকে দিল্লি এলাম গত ১৫ তারিখ। খ্রীষ্টীয় দলিতদের মুক্তিকামী ধর্মতত্ত্ব নিয়ে একটি সম্মেলন-এ। আমার নিজের একটা আলোচনাপত্র পড়ার কথা ছিল। পড়লাম-ও। রাখা হয়েছিল দিল্লির অদূরে দ্বারকা নামে একটা জায়গায়। সেখানকার বিলাসবহুল লেবুয়া হোটেল-এ। এই ধরনের আরও দু-একটি বিলাসবহুল হোটেলে থাকার সুযোগ হয়েছে আমার আগে। এরম জায়গায় গেলেই আমি আসার সময় বাথরুম-এ দেওয়া দামি সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি গুলো নিয়ে নিই। নিজে মাখি, মা বাবাকে দিয়ে দিই। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে খাবারেরও ব্যবস্থা এলাহি। মার্কিন দেশের বিলাসী হোটেলগুলিও অনেক ক্ষেত্রে এরকম (যেটা কিনা মার্কিন দেশের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মত নয়, তাই স্রেগ মার্কিন দেশের মত বলাটা বড়ো ভুল।) ১৭ তারিখ ফেরার পালা, দিল্লির আরেক জায়গায়। সম্মেলনের সংগঠকরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন। আমার থাকা খাওয়া যাওয়া আসা সব রকম খাইখরচ এরাই দিয়েছেন।
গাড়িতে উঠে বসলাম মালপত্তর সমেত। আমার ভাড়াগাড়ি বা ট্যাক্সি চড়লে চালকের সম্বন্ধে খোঁজ নেওয়ার অভ্যাস আছে — বিশেষত সে কোথাকার, আয় কেমন, জীবন কেমন কাটে, ইত্যাদি। প্রথমে হিন্দি থেই শুরু করলাম। তবে প্রত্যুত্তরে যে হিন্দি শুনলাম, সেটিও ইষৎ বাংলা। হিজ্ঞেস করলাম কোথাকার উনি। হিন্দিতে বললেন, কলকাতার। তখন আমিও যে বাঙ্গালি ভেঙে বলাতে জানালেন যে ইনি আসানসোলের কাছে শ্রীপুরের (ওনার কথায় সিরিপুরের)। নাম ব্রিজেশ। বিহার ও বাংলার সীমান্ত এলাকায় যে মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বহুকালের, তারি মূর্তিমান প্রতীক। আসানসোল পাটনার কাছে হলেও ব্রিজেশ জানিয়েছিলেন আমাকে, তিনি ণ্ণকলকাতার’। এখানে দ্বারকাতেই থাকেন। আসরিপুরে বড়ো দাদা আছেন।
মাঝে গাড়ি চালাতে চালাতেই মুঠোফোনে হিন্দি ভাষায় কার সাথে কথা বললেন, মনে হল স্ত্রী বা অমন কেউ। আমাকে বললেন, ৪ দিন ছুটি চেয়েছিলাম, দেয়নি। বললাম, কিসের ছুটি? বলল, স্ত্রী গর্ভবতী। তাই ছুটি চেয়েছিলাম। আমি বললাম, ব্যাথা উঠেছে? সে বলল, হ্যাঁ, তাইত সে চেনা বন্ধুদের জানালো। তাছাড়া এখন তার মা তার স্ত্রী-এর সাথেই আছেন। কিছুটা বিব্রত বোধ করে আমি বললাম, আপনি বরং চলেই যান। আমি একটা ট্যাক্সি নিয়ে নেব। কাউকে কিছু বলতে হবে না। উনি বললেন, তা কি হয় স্যার। ডিউটি হল ডিউটি। গাড়ি চলতে থাকলো।
আসলে চোখ বুজলে সকলি শান্তি, চোখ খুলে গা এলিয়ে দিলেও সকলি মনোরম, কিন্তু একটু খুলে দেখলেই বাস্তবটা খুব অন্যরকম। শান্তির একটা চড়া দাম আছে। স্ত্রী-র যখন শিশু হবে, তখন ব্রিজেশ দিল্লির শহরে গাড়ি চালাবে, মোবাইল এ উৎকন্ঠায় খোঁজ নেবে, সব ঠিকঠাক আছে কি না।
Leave a Reply