বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে বাঙালি বসবাসকারীদের দ্বারা পাহাড়ি জনজাতির মানুষের ওপর, বিশেষত মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেই চলেছে। আদিবাসীদের মানবাধিকারের পক্ষে সওয়ালকারী একটি সংগঠন ‘কাপিঙ ফাউন্ডেশন’ সম্প্রতি জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে এরকম প্রায় ৫১টি ঘটনার কথা তারা জানে, এবং তাতে ৬৬ জন আদিবাসী মহিলা অত্যাচারিত হয়েছে। তার মধ্যে ৬ জন ‘জুম্ম’ মহিলাকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়েছে। ৩১ জন মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ২৪ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ৫ জন মহিলাকে অপহরণ করা হয়েছে।
এই বছরেই এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে ওই মানবাধিকার সংগঠন।
২৫ এপ্রিল একজন ৪০ বছর বয়সি মূক আদিবাসী মহিলাকে খাগরাচারী জেলার মাটিরাঙা উপজিলা বামাগুমতি মৌজার কিরণ মাস্টার পাড়ায় দুই বাঙালি যুবক ধর্ষণ করে। মহিলাটি ওই দিন তার কাকার বাড়ি গিয়েছিল, কিন্তু কাকা কিরণ ত্রিপুরার বাড়ির সবাই নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিল। ওই দুই যুবক মহিলাকে একলা বাড়িতে পেয়ে পাশের জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি। বাঙালিরা এই ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে।
১৪ এপ্রিল খাগরাচারীর মানিকচারি উপজিলার জোগিয়াচালা মৌজার আদাবাড়ি গ্রামে পনেরো বছরের এক আদিবাসী কিশোরীকে চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় কাজে নেবার লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে হোটেলে রেখে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় এক যুবক। কিশোরীর মন জয় করার জন্য সে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিয়েছিল। মেয়েটি তার কানের দুল বিক্রি করে দিয়ে বাসের ভাড়া জোগাড় করে ঘরে ফেরে।
২০১১ সালের মার্চ মাসে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন এই বিষয়ে চট্টগ্রামে একটি মানববন্ধন করেছিল। সেখানে এক আদিবাসী মানবাধিকার কর্মী ডনাই প্রু মারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের সমাজের মধ্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ বিষয়ে কোনো রূপ ব্যবহারের প্রচলন ছিল না। এ কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অনেকাংশের মধ্যে ধর্ষণ বিষয়ে কোনো শব্দের ব্যবহার বা প্রচলন এ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি অভিবাসীরা আসার পর থেকে অনেক আদিবাসী নারী ধর্ষিত হওয়ার ফলে আদিবাসীদের মাঝে আতঙ্কের রূপে এ ধর্ষণ শব্দটির পরিচয় হয়ে গেল। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীরা অপহরণের পরে ধর্ষিত হচ্ছে, যত্রতত্র ধর্ষিত হচ্ছে, শুধু ধর্ষণ করে ক্ষান্ত হয়নি, ধর্ষণের শেষে মেরে ফেলেছে ও মেরে লাশ গুম করেছে এমন নজির রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীরা নিজ মাতৃভূমিতে আগের মতো স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে না ও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সময় আদিবাসী নারীরা রাত দিন ২৪ ঘন্টা পাহাড়ে, জঙ্গলে ও নির্জন জায়গায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করেছে। এমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এধরনের কোনো নজির নেই ও ছিল না। আর এখন খেত খামারে, নিজ বাড়িতে ও যত্রতত্র আদিবাসী নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে ও নিরাপত্তাহীনতায় তাদের গৃহবন্দির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে ও দারিদ্রের গতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে’।
কুশল বসু, কলকাতা, ২৯ এপ্রিল, তথ্যসূত্র http://chtnew supdate.blog spot.in. সৌরভ সরকারের দেওয়া লিঙ্ক থেকে। ছবিতে ২০১১ সালে একটি মানববন্ধন
Leave a Reply