জিতেন নন্দী, রবীন্দ্রনগর, সন্তোষপুর, ১৩ আগস্ট#
আষাঢ় মাসের গোড়ার দিকের বৃষ্টিতে যখন আমাদের বরবটি গাছটা বেশ ঝাঁকরা হয়ে উঠেছে, একদিন লক্ষ্য করলাম তার ভিতরে কতকগুলো পিঁপড়ের বাসা। বরবটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে একটা বাঁসের কঞ্চি দিয়ে বাসাগুলো ভেঙে দিতেই পিলপিল করে বেরিয়ে এল শত শত পিঁপড়ে। আমি সাবধানে সরে এলাম। এরপর দেখলাম, আমাদের বারান্দার এক কোণে বেলফুল গাছের ডাল ঘেঁষে আর একটা ওরকম বাসা। যদি পিঁপড়েরা ঘরে ঢুকে পড়ে সর্বনাশ! তখন ওদের ডেঁয়ে পিঁপড়েই মনে হয়েছিল, কামড় খেয়েছি বেশ কয়েকবার। তাই আবার ভেঙে দিলাম ওদের বাসা।
এরপর মাসখানেক আগে একটা পাতিলেবু গাছের কাণ্ডের মাঝামাঝি জায়গায় দেখলাম ওই পিঁপড়ের বাসা। তখন বর্ষা এসে গেছে। শুকনো পাতার আঁশ দিয়ে বানানো, তবে কেমন একটা ছাড়া ছাড়া।
আজ বিকেলে সেই বাসাটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। একদম নিটোল বুনট, যেন পাখির বাসার মতোই দেখতে। এই শ্রাবণের শেষের ভরা বর্ষার দাপটেও কিন্তু বাসাটা নষ্ট হয়ে যায়নি। চোখটা কাছে নিয়ে গিয়ে দেখি, ওপরের দিকে একটা ফুটো দরজার মতো, সেখান দিয়ে পিঁপড়েরা দিব্যি যাতায়াত করছে। লেবু গাছটার ওপরের ডগায় কচি পাতায় দেখলাম আর একদল পিঁপড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ধীর গতিতে। কিছুক্ষণ দেখে বুঝলাম, ওই পাতাগুলো ওরা মুখ দিয়ে কাটছে, সম্ভবত খাচ্ছেও। আরও কাছে গিয়ে দেখলাম, অনেকটা কালো ডেঁয়ে পিঁপড়ের মতো দেখতে হলেও আকৃতিতে একটু লম্বাটে রোগা আর ওদের পিছনের ডিম্বাকৃতি কালো অংশটার গায়ে সাদা একটা ডোরা।
এর আগে আমি ভাবতাম পিঁপড়েরা থাকে ঘরের মেঝে বা দেওয়ালের ফাটলে কিংবা গাছের কোটরে। গাছে বা দেওয়ালে যে তারা এত সুন্দর বাসা বাঁধতে পারে আমার জানা ছিল না। পিঁপড়েদের শ্রমিক, যোদ্ধা ইত্যাদি আখ্যা দিতে শুনেছি, কিন্তু তারা যে পাকা ঘরামি আজ জানলাম।
নিচে পিঁপড়ের বাসা তৈরির ধারাবাহিক চিত্র, প্রতিবেদকের তোলা
Leave a Reply