অমিতা নন্দী, গার্ডেনরীচ, ২৯ আগস্ট#
আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ইউবিআই হেড অফিসের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হয় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখা থেকে আসা প্রায় একশোজন কর্মচারী। ইউবিআই এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ডাকা এই কর্মসূচিতে খুব অল্প সময়ের নোটিশে যোগ দেয় কর্মচারীদের আর একটি ইউনিয়ন, ইউবিআউ শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে দু-জন বক্তব্য রাখেন। তা থেকে জানা যায় :
দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখার কর্মচারীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। কয়েকবছর ধরে প্রতি মাসে অনেক কর্মচারী অবসর গ্রহণ করছে। শূন্যপদের তুলনায় নতুন কর্মচারীর নিয়োগ হচ্ছে নামমাত্র। অথচ এই অবস্থাতেই বেশ কিছু নতুন শাখা খোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলত গ্রাহক পরিষেবা ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কর্মচারীদের কাজের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে, অনেক সময়েই কর্মচারীদের (বিনা পারিশ্রমিকে) অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বেশ কিছু শাখায় বাইরের লোক দিয়েও নানারকম কাজ করানো হচ্ছে — নিয়ম বহির্ভুত ভাবে। শাখাগুলিতে সুষ্ঠুভাবে গ্রাহক পরিষেবা দিতে হলে যত সংখ্যক কর্মচারীর প্রয়োজন সেই ‘ম্যানপাওয়ার অ্যাসেসমেন্ট’ মোটেই বাস্তবোচিত নয় এবং তার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি মানা হচ্ছে না, ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এই অদূরদর্শিতায় শাখাগুলিতে সমস্যায় পড়ছে গ্রাহকেরা এবং কর্মচারীরা। গ্রাহকদের বিক্ষোভের আঁচ প্রতিনিয়ত তাদেরই ওপর গিয়ে পড়ে।
ইউবিআই-এর নেতাজি সুভাষ রোড শাখায় সম্প্রতি এমনই একটি বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। উক্ত শাখার জন্য হেড অফিস কর্তৃপক্ষ ক্লার্কের সংখ্যা কমিয়ে ১২ জন করেছে এবং গত কয়েকমাসে অবসরগ্রহণের কারণে সংখ্যাটা কমে ৬ জন হয়েছে। ফলে গ্রাহক পরিষেবা দিনের পর দিন ব্যাহত হয়েছে। প্রায় আড়াই বছর আগে ওই শাখার পূর্বতন বিল্ডিংয়ের ছাদ ভেঙে যায়। কর্মচারীরা আশেপাশের বিভিন্ন শাখায় ছড়িয়ে গিয়ে নানা অসুবিধার মধ্যে কাজ করছে। বর্তমানে শাখাটি যেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে তা ব্যাঙ্কের সেন্ট্রাল স্টেশনারি গোডাউনের একটি অংশ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সাউথ রিজিয়ন ম্যানেজার (সিআরএম) ওই শাখায় গেলে গ্রাহকেরা তাদের অসুবিধার কথা জানায়। তিনি অবিলম্বে সমস্যার সমাধান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হতে থাকে। গত ১৪ আগস্ট তারিখে ব্যাঙ্কের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ (একজিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) ওই চিফ রিজিওনাল ম্যানেজাররা (সিআরএম) সহ নেতাজি সুভাষ রোড শাখা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তখন শাখায় উপস্থিত গ্রাহকেরা তাঁদের ঘিরে ধরে ব্যাঙ্কের পরিষেবা ও কর্মচারী-অফিসারদের সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। এই অস্বস্তিকর অবস্থা এড়ানোর জন্য নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে তাঁরা তড়িঘড়ি একটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ওইদিনই দুজন ক্লার্ক ও তিনজন অফিসারকে এবং চারদিন পরে অবশিষ্ট চারজন ক্লার্ককে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দেন। এই ব্যবস্থা গ্রহণের আগে তাঁরা কর্মচারীদের সঙ্গে বা তাদের কোনো ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। মূল সমস্যাগুলির সমাধান না করে, শুধুমাত্র কর্মচারীদের দোষী সাব্যস্ত করেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের অলীক প্রচেষ্টা করছেন
Leave a Reply