২২ মে, ২০১৩, সুন্দরবন সরবেড়িয়া হসপিটাল, পলান কুন্ডু#
সরবেড়িয়া শ্রমজীবী হসপিটাল প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্ণ হল। ২০০২-এর ১২ই মে রক্তদান দান শিবিরের মাধ্যমে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। একইভাবে এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন আহও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করে চলেছে। ‘রক্তদান জীবনদান’ –এই কথাটি বিভিন্ন মাধ্যম বিভিন্নভেব প্রচার করে থাকে। এবং আমরা যারা নিজেদেরকে একটূ এগিয়ে থাকা মানুষ হিসাবে মনে করি তারা প্রত্যেকেই একথা জানি। এতদ্সত্ত্বেও রক্তদান শিবিরগুলিতে রক্তদাতাদের অভাব যথেষ্ট-ই চোখে পড়ে। গত কয়েকবছর যাবৎ আমি সরবেড়ীয়ায় এই দিনটিতে উপস্থিত থেকে অনুভব করেছি এখানকার ছবিটা সম্পূর্ণই উল্টো। এখানে রক্তদাতাদের সংখ্যা এতই বেশী যে হাসপাতালের কর্মীদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়। রক্তদান করতে গেলে শারীরিক কিছু সুস্থতার দরকার হয়। যেমন রক্তের চাপ ঠিক আছে কিনা বা অল্প কিছুদিনের মধ্যে কোন ভারী রোগ হয়েছিল কি না, ইত্যাদি। কিন্তু আমি দেখেছি যে রক্তদাতার রক্তের চাপ কম, তথাপি সে লবণ-চিনির সরবত খেয়ে রক্তের চাপ বাড়িয়ে নিয়ে রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আরেকটা ঘটনার কথা বালি, একজন বয়স্ক মানুষের কোলে একটি বছর চারেকের শিশু কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল ঘুরে বেড়াচ্ছে। বয়স্ক মানুষটি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তার কান্না থামাবার। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছেন। শিশুটি কাঁদছে কারণ তার রক্ত নেওয়া হচ্ছে না, তার নাম কেন রক্তদাতাদের খাতায় লেখা হয় তবেই তার কান্না থামে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণার একেবারেই অনামী গ্রাম সরবেড়িয়া। মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রধান অবলম্বন সেখানে কিছু চাষবাস আর মাছের ভেরীতে কাজ, রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে বা রিক্সা চালানো। গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ শিক্ষার কোনরূপ সুযোগ পায়নি। যেখানে চিকিৎসার জন্য ৭—কিমি দূরে কোলকাতা শহরে আসতে হয়। সেখানকার মানুষের মধ্যে রক্তদানের আগ্রহ আমাকে অভিভূত করে, লজ্জাও দেয়। এই রক্তদান শিবিরে সরবেড়ীয়ার আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে মানুষজন দল বেঁধে রক্ত দিতে আসে। পাঁচ থেকে সাত কি.মি. পথ পায়ে হেঁটে। এই রক্তদান শিবিরে আমার শরীরের সামান্য রক্তদিতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। এ’বছর রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয় ১৯শে মে ২০১৩।
Leave a Reply