রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ ছাত্রকে ‘আজীবন’ বহিষ্কার করেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের অপরাধ, তারা উপাচার্যের ঘরে ও অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই পাঁচ ছাত্রকে সরকারি আইনজীবীর কড়া সওয়ালের ভিত্তিতে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতও দেওয়া হয়েছে একটি আদালতে। ওই পাঁচ ছাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পদাধিকারী এবং শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য। কর্পোরেট এবং বড়ো মিডিয়া সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ‘সাহসী’ পদক্ষেপকে দু-হাত তুলে সমর্থন করেছে।
আমাদের প্রশ্ন ওই সাহস নিয়েই।
ওই পাঁচ ছাত্রকে অপরাধীর তকমা দেওয়া হচ্ছে। দিচ্ছে সরকার-কর্তৃপক্ষ-মিডিয়া। ইস্যুটাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন করাকেই অপরাধের আওতায় ফেলে দিচ্ছে কেউ কেউ। আবার একথাও উঠছে, ছাত্র আন্দোলনের বদলে কলেজে ভর্তি সমস্যা নিয়ে ওই ছাত্ররা যা করেছে তা গুণ্ডামির শামিল।
আন্দোলন ভালো, গুণ্ডামি খারাপ — এ কথা আমরা সবাই জানি এবং মানিও বটে। কিন্তু সমাজের লব্ধ প্রতিষ্ঠরা যখন আন্দোলনের নামে গুণ্ডামি করে তখন এ কথা আমরা মানি না। আমাদের চেনা শাসক ও বিরোধী দলের নেতা ও মন্ত্রীরা অনেকেই কমবেশি আসবাব, কাঁচ এবং অফিস ভাঙচুর করেছে এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত। আবারও করবে নিশ্চয়। চোখ রাঙানি, গা জোয়ারি এসব তো আর প্রমাণ রাখে না, সাক্ষীও রাখে না অনেক সময়। রাজনৈতিক খুনোখুনি প্রতি মাসেই তো বেশ কিছু হয়, সামনের পঞ্চায়েত ভোটের মুখেও হবে, কেউ না চাইলেও হবে। আন্দোলনের নামেই হবে। আজ একথা বলতে দ্বিধা হয় না, আমাদের রাজনীতির মূল উপাদানই গুণ্ডামি। এবং আমাদের দেশ-সমাজ পরিচালনার মূল পরিকাঠামোও ওই রাজনীতি, ওই দল। একথা সংবিধানস্বীকৃতও বটে। অর্থ ও পেশি ক্ষমতার লীলাখেলা দেখা আর মাঝেসাজে বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়া আর খুব একটা কিছু করার থাকে কি পাতি লোকের? ছাত্ররা, কমবয়সিরা তো এসব থেকেই শেখে, নাকি?
খবরে প্রকাশ, এক ছাত্রের ঘরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কম্পিউটার পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কম্পিউটার বাইরে পাচার হয়ে গেল আর কর্তৃপক্ষ জানতে পারল না? কে আগে অভিযুক্ত হবে, কর্তৃপক্ষ না ছাত্রটি? ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই তো ওই ছাত্ররা পড়াশুনা করছে, কয়েক বছর ধরে। বাবা-মা তো ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণ্ডামি করতে পাঠায় না, ছাত্ররাও সেখানে গুণ্ডামি করতে ভর্তি হয় না। ছাত্রের গুণ্ডামিতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার দায় নেই?
কর্তৃপক্ষ এক ‘আজীবন বহিষ্কার’ নামক শাস্তি দিয়েছে। অনেকটা সাতবার ফাঁসি দেওয়ার মতো! এবং শাস্তিও এখানে সংশোধনের জন্য নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষাজীবন থেকেই বিদেয় করে দেওয়ার জন্য। এটা কি শাস্তি না প্রতিশোধ? এটাকে কেন প্রাতিষ্ঠানিক গুণ্ডামি বলা হবে না? আরও বড়ো প্রশ্ন, এটা কি ভণ্ডামি নয়?
ছাত্রদের গুণ্ডামির ঘটনার আরশিতে যদি নিজেদের দিকে একবার তাকানোও যেত, তাহলে সেটা হত সাহসের প্রথম পাঠ।
Leave a Reply