গুজরাতে প্যাটেল কৌমের লক্ষ লক্ষ মানুষের ২৫ আগস্টের জমায়েত ও বিক্ষোভ, রাষ্ট্রীয় দমন ও পাল্টা বিক্ষোভ আমাদের সচকিত করে দিয়েছে। প্রশাসন আমেদাবাদ, সুরাত সহ বেশ কয়েকটি শহরে কার্ফু জারি করে, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে এবং সশস্ত্র পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে এই বিক্ষোভ দমন করতে চেয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে এই বিক্ষোভে প্যাটেল কৌমের জন্য সমস্ত ধরনের ওবিসি সংরক্ষণ দাবি জানান হয়। এই বিক্ষোভের নেতা বছর বাইশের হার্দিক প্যাটেল, বিক্ষোভের সংগঠক চ্ছ্রপতিদার আনামত আন্দোলন সমিতি’ এবং প্যাটেল কৌমের অন্যান্য সংগঠন।
কিন্তু দূর থেকে যতদূর বোঝা যায়, এই বিক্ষোভের মধ্যে রয়েছে গ্রাম গুজরাতের ক্ষোভ। একদা অবস্থাপন্ন, উঁচু জাতের জমি-মালিক কৃষক সম্প্রদায় কৃষির সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে তার মান এবং কর্তৃত্ব হারাতে বসেছে। তাই এই বিক্ষোভের স্বতস্ফূর্ত মুখ হার্দিক প্যাটেলের গলায় বারবার শোনা গেছে, গত কয়েক বছরে গুজরাতে যে আট হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে, তারা প্রায় সবাই পতিদার বা প্যাটেল। শহরের ব্যবসায়ী প্যাটেল দেখে অভ্যস্ত শহুরে মিডিয়া। তাই এদের চোখে পতিদার অচেনা। অবিশ্বাসী মিডিয়ার কাছে সহজ গলায় হার্দিক প্যাটেল বলে দিয়েছে, এই বিক্ষোভের উৎস জানতে হলে গুজরাতের গ্রামে যাও। যেখানে তোমরা কখনো যাও না।
বিক্ষোভের স্বতস্ফূর্ত মুখের গলায় শুনতে পাওয়া গেছে, ‘আমার আদর্শ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, আমার আদর্শ বাল থ্যাকারে, ভারতবর্ষ মূলত: হিন্দুদের দেশ।’ আরো শোনা গেছে — ‘মানুষ মূলত: স্বার্থপর। যখন আমরা আমাদের মেয়েদের গায়ে যারা হাত দেয় তাদের হাত ভেঙে দিই, তখন মানুষ আমাদের সমর্থন করে …’। এইসব কথা শুনলে প্রগতিশীল চোখেও বিক্ষোভটি অচেনা লাগে।
কিন্তু আমাদের দেশে উঁচু জাতের জমি-মালিক কৃষক সম্প্রদায়ের ভেতরেই কি এই ম্যাচো, জাত্যাভিমানের বীজ নেই? কৃষির সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে তার সদ্য-যুবকদের নেতৃত্বে এই ভড়ংহীন আত্মপ্রকাশই কি কাঙ্খিত নয়? ভালো-মন্দের বিচারের বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভের ভেতরের কথাটা কি আমরা শুনতে চাইছি?
Leave a Reply