বঙ্কিম, হিজলিয়া, অশোকনগর, উত্তর চব্বিশ পরগণা, ১১ মার্চ#
জাঁকেরা, সেলিমা বিবি, ইসমোতারা-দের পাশাপাশি বেডে শুয়েই রক্ত দিচ্ছে সরিফুল, আবু তাহের আতা, শাহানওয়াজ-রা। পাশে দাঁড়িয়ে আছে নিরন্তর উৎসাহ দিচ্ছে, ভরসা দিচ্ছে তাদের ভাবী, দিদি নুপুর (রায়) মণ্ডল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নার্স। হিজলিয়া গ্রামের মানুষের রোগে ভোগে চিকিৎসায় ভরসা নুপুরদি। তাঁর পাশেই আছেন তাঁর স্বামী শাহজাহান মণ্ডল, হিজলিয়া হাই মাদ্রাসার বিজ্ঞানের শিক্ষক। ওদের সাথেই জড়ো হয়েছে গ্রামের জনা পঁচিশ তিরিশ তরতাজা তরুণ। বেশ কিছুদিন ধরে ওরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়েদের, মেয়েদের সহ সকলকে রক্তদান সম্পর্কে বুঝিয়েছে, রক্তদাতাদের সম্ভাব্য নামের তালিকা করেছে। আজ ১১ মার্চ। এই প্রচণ্ড গরমে ঘরেবাইরে কাজকর্ম সেরে গ্রামের মানুষ হাজির হয়েছে যথাসময়ে। প্রায় পঁচাশি জনের বেশি হাজির হয়েছিল রক্তদানের জন্য। রক্তদান করেছে পঁচাত্তর জন। তাদের মধ্যে তেইশ জন বিভিন্ন বয়সের মহিলা। গতকাল রাতে গ্রামের শীতলা পূজার অনুষ্ঠানে বেড়াতে এসেছিল কয়েকজন। তাদের মধ্যেও জনাপাঁচেক রক্ত দিয়ে গেল আজকের শিবিরে। এর সাথে আটদশ কিলোমিটার দূরের বাগপুল গ্রামের পাঁচ ছয়জন মানুষ। রক্তদান চলতে চলতেই কাছের মাদ্রাসা থেকে কচিকাঁচারা এসে ভিড় করল রক্তদান শিবিরে। প্যান্ডেলের কাপড় সরিয়ে তারা দেখতে লাগল, কীভাবে রক্ত নেওয়া হয়। তাদের চোখেমুখে বিস্ময়ের চাহনি।
ভিড়ের মাঝে একটি যুবক বলল, আমিও রক্ত দিতাম, কিন্তু গাড়ি নিয়ে এসেছি তো — ও আখের রস বিক্রি করে। গাড়ি নিয়ে এসেছে অনেক দূর থেকে। ও বলল, মাঝে মাঝে ও রক্ত দেয়। মাস চারেক আগেও রক্ত দিয়েছে। ও বলছিল, রক্ত দেওয়ার পর এই যে দুধ খাওয়াচ্ছে, এটা আমার ভালো লাগে না বুঝলেন, এসবের দরকার নেই।
এই রক্তদান শিবিরে রক্ত সংগ্রহ করছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাডব্যাঙ্ক, রক্তদাতারা কোনো গিফট নিয়ে বাড়ি ফিরছে না। অথচ তাদের মুখে এক তৃপ্তির খুশি লেগে আছে। শিবিরের কোথাও কোনো বড়ো কোম্পানি বা ব্যবসাদারের বিজ্ঞাপন নেই। নেই নেতা মন্ত্রী বা সেলিব্রিটির আনাগোনা। গ্রামবাসী সহ সকলের সাহায্য সহযোগিতায় এই স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির হল বহু বছর বাদে।
Leave a Reply