শমীক সরকার, কলকাতা, ১৫ আগস্ট#
গাজায় ইজরায়েলি সামরিক হানা ও সহস্রাধিক নিরীহ মানুষের মৃত্যু পরিস্থিতিতে, গাজার ওপর ইজরায়েলি জবরদখল ও যুদ্ধ বন্ধের দাবি নিয়ে ৮ আগস্ট দুপুর দুটো থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত একটি অবস্থান সভা হয় কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে। উল্লেখ্য, ওইদিনই ইজরায়েলের এবারকার গাজা আগ্রাসনের একমাস পূর্তি। এই সভার উদ্যোক্তা ছিল কিছু ছোটো পত্রিকা, যাদের মধ্যে রয়েছে অনীক, বাংলার মুখ, রবিশস্য, মন্থন, হেতুবাদী, আকিঞ্চন প্রভৃতি। সভা থেকে ভারতে ইজরায়েলি দূতাবাসের উদ্দেশ্যে একটি আবেদনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। সেই স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্রগুলি ওইদিনই পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইমেল-এর মাধ্যমে। আগের দিন রাত্রে অন্তত ত্রিশজন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক স্বাক্ষর করে ওই বয়ানটিকে পাঠিয়েছিল ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূতের কাছে।
ওই বয়ানে বলা হয়,
সারা পৃথিবীর মানুষ আজ জানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শান্তি প্রক্রিয়া কত বড়ো ভণ্ডামি। গণতন্ত্রের নামে এই ন্যাকামি কতদিন চলতে পারে? যাদের আর্থিক মদত, ক্ষেপণাস্ত্র-ট্যাঙ্ক-গোলাবারুদের ঢালাও সরবরাহ আর কূটনৈতিক সমর্থন ছাড়া একদিনও প্যালেস্টাইন ও গাজার ওপর ইজরায়েল রাষ্ট্রের অবরোধ আর আগ্রাসন চলতে পারে না, হায়! সেই আমেরিকাই শান্তির দূত! গাজার ভিতর ঢুকে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স অত্যাচার চালাবে, তার আকাশ আর সমুদ্রকে দখল করে হানা দেবে, এই পরিস্থিতিতে কোনো যুদ্ধবিরতি — তা সাময়িক বা অপেক্ষাকৃত লম্বা যাই হোক না কেন — শান্তি আনতে পারে না।
গত সাতচল্লিশ বছর ধরে চলছে প্যালেস্টাইনের ওপর এই অবরোধ আর জবরদখল। গাজায় নির্বাচিত সরকার আর প্রশাসন আছে ঠিকই, কিন্তু গাজা যেন এক বড়োসড়ো জেলখানা! শুধু গাজার ভূখণ্ডেই নয়, ইজরায়েলের ভিতর বা ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, কোথাও প্যালেস্তাইনিদের সমান অধিকার নেই। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী জনতা রয়েছে ওখানেই। দশকের পর দশক আমেরিকার সৌজন্যপ্রাপ্ত শান্তি আলোচনার মোদ্দা ফল হল, ইজরায়েলি বসতি এলাকার ক্রমাগত বৃদ্ধি। কোথায় যাবে হতভাগ্য প্যালেস্তাইনিরা?
তাই, আমরা চাই যুদ্ধের অবসান এবং ইজরায়েলি অবরোধের অবসান। আমরা চাই এই অবরোধের পিছনে সক্রিয় মার্কিন বিদেশনীতির পরিবর্তন। আমরা হামাসের জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। কিন্তু একইসঙ্গে বলতে চাই, তাদের এই জঙ্গি মনোভাবের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মার্কিন ও ইজরায়েলি রাষ্ট্রনীতি। আমরা স্বাগত জানাই, আমেরিকা এবং অন্যত্র শান্তিকামী ইহুদিদের মুক্তি আন্দোলনকে, যারা ঘোষণা করেছে, ণ্ণপ্যালেস্তাইনিদের দমন করে কখনোই ইজরায়েলিরা নিরাপদ নয়’। আমরা সমস্ত ধরনের জাতি-বর্ণ-ধর্ম-সংস্কৃতিগত বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার বিপক্ষে।
এই বয়ানে স্বাক্ষর সংগ্রহের সময় কয়েকশো মানুষ উৎসাহভরে স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষরকারীদের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তাও হয়। একজন স্বাক্ষরকারী নিজে থেকে কয়েকটি পাতা নিয়ে অন্যদের স্বাক্ষর করানোর জন্য নিয়ে যান। অনেকেই লিফলেট (যেটাতে ভারতে ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূতের নাম ঠিকানা দেওয়া ছিল) চেয়ে নেন। পাঁচশ’ লিফলেট শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনেক স্বাক্ষরকারী ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূতের নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে যান। একজন অর্থনীতির ছাত্র কাগজে পরে ঘটনাটা জেনেছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ইজরায়েল মারছে কেন গাজার মানুষদের। একজন বলেন, এসব চিঠি লিখে কিছু হবে না। আমেরিকা আর ইজরায়েলকে শিক্ষা দেওয়া দরকার। একজন নিন্দা করেন এই প্রচেষ্টার, বলেন, গাজা নিয়ে প্রতিবাদ না করে নিজেদের ঘর পুড়ছে মমতা জমানায় — তার প্রতিবাদ করা দরকার। সব মিলিয়ে কতিপয় মানুষের হাত-মাইক সহযোগে এই প্রতিবাদ অবস্থানে প্রচুর পথচলতি মানুষ সামিল হয়ে যায়। বড়োসরো সমাবেশের উচ্চধ্বনি যেমন পথচলতি মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে, ছোটো এবং অনুচ্চ সমাবেশের আবেদন অন্য মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারে।
এই দিনই কলকাতায় আরো কয়েকটি জায়গায় মুসলিম কৌমের কিছু সংগঠনের উদ্যোগে গাজায় ইজরায়েলি হানার বিরুদ্ধে বড়োসরো গণসমাবেশ হয়।
Leave a Reply