কুশল বসু, ৩১ আগস্ট#
৫১ দিন ধরে গাজার ওপর ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের আকাশ-স্থল-জলপথে সামরিক আগ্রাসনের পর ২৬ আগস্ট মাসাধিক কালের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছে মিশরের মধ্যস্থতায়। যুদ্ধবিরতির শর্ত হলো, গাজার ওপর অবরোধ কিছুটা আলগা করবে ইজরায়েল — ভূমধ্যসাগরে ৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত গাজার মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে এবং গাজা-ইজরায়েল সীমান্তের ছ’টি ও গাজা-মিশর সীমান্তের একটি ক্রসিং পণ্য পরিবহণের জন্য খুলে দিয়ে। বিনিময়ে গাজা থেকে ইজরায়েলের ওপর নির্বিষ রকেট-ক্ষেপণ এবং গাজার ওপর আকাশপথে ইজরায়েলি হানা বন্ধ হবে, ইজরায়েলের স্থলবাহিনী গাজা থেকে বেরিয়ে যাবে।
গাজাবাসীর পক্ষে শাসক হামাস ও ইসলামিক জিহাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। স্থির হয়েছে, গাজায় একটি সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর নির্মাণ এবং গাজার নিরস্ত্রীকরণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে একমাস পরে মিশরের কায়রোতে আলোচনায় বসবে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তানি প্রতিনিধিরা। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে গাজার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাত্র ৩ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব পর্যন্ত মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছিল ইজরায়েল। তাছাড়া ২০০৭ সালে গাজায় হামাস ক্ষমতায় আসার পর ইজরায়েল-গাজা সীমান্তের ছটি ক্রসিং-এর মধ্যে চারটিই বন্ধ করে দিয়েছিল ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। আরও একটি, কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে দিনে মাত্র দু-তিনশো মালবাহী গাড়ি ঢোকা বেরোনোর অনুমতি দিয়েছিল তারা। মিশর-গাজা সীমান্তের রাফা ক্রসিং-ও ইজরায়েলের তৎপরতায় বন্ধ করে দিয়েছিল মিশর, এবার সেটাও খুলতে চলেছে। স্বভাবতই, এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে গাজাবাসী বিজয় হিসেবে দেখছে। কাতারে কাতারে রাস্তায় নেমে বিজয় উৎসব পালন করেছে তারা।
তবে এই ‘বিজয়’ অর্জন করতে গিয়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাদের। এবারের আগ্রাসনে গাজায় সাড়ে একুশ শো মানুষ মারা গেছেন, যাদের মধ্যে কয়েকশো শিশু। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে, মৃতদের সত্তর শতাংশই অসামরিক নিরীহ নাগরিক। প্রায় এগারো হাজার আহত। সতেরো হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, সাঁইত্রিশ হাজার আংশিক বিধ্বস্ত। অপরপক্ষে ইজরায়েলের তিয়াত্তর জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে ছেষট্টি জন সৈন্য।
এবারের আগ্রাসন নিয়ে ইজরায়েলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এটাকে পরাজয় হিসেবে মনে করছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, এবারের যুদ্ধে হামাসের তিনজন শীর্ষ কমাণ্ডারকে মেরে দেওয়া গেছে, তার ফলে হামাসের দফারফা হয়েছে। এরপরেই অবশ্য তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই যুদ্ধের খরচ তুলতে ইজরায়েলের সামরিক খাত বাদ দিয়ে সমস্ত খাত থেকে ২-৩ শতাংশ বাজেট কেটে নেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি কোপ পড়বে গরীব ইজরায়েলবাসীর শিক্ষাখাতে।
এছাড়া, ইজরায়েল দখলীকৃত ওয়েস্টব্যাঙ্কের জেরুজালেম সংলগ্ন ৯৮৮ একর জায়গা — যা আদতে প্যালেস্তানি মালিকানায় — তা ঈহুদি সেটলার বসানোর জন্য ইজরায়েল রাষ্ট্র করায়ত্ত্ব করে নেবে বলে জানিয়েছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। উল্লেখ্য, এভাবেই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের হাজার হাজার একর প্যালেস্তানি মালিকানার জমি কব্জা করে ঈহুদী সেটলার বসিয়ে চলেছে ইজরায়েল, সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই।
Leave a Reply