নলিনী প্রামাণিকের লেখা গল্প সংকলন ‘দুর্ভিক্ষ’ জয়নগর-মজিলপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে প্রকাশিত। খুব সাধারণ মলাটে বাঁধানো পঁয়ত্রিশ টাকা সাহায্য মূল্যের এই বইয়ে ২৭টা ছোটো বড়ো গল্প প্রায় একশো পাতায় ধরা রয়েছে। গল্পগুলোর বেশিরভাগ আগে ছাপা হয়েছিল ‘ইস্পাতের ফুল’, ‘চাবুক’ ইত্যাদি ছোটো পত্রিকায় এবং ‘জয়নগর ইনস্টিটিউশন’ ইত্যাদি স্যুভেনিরে।
গল্পগুলোর সাইজ একপাতা থেকে দশপাতার মধ্যে। এক-দেড় পাতায় গল্প জমানো বেশ কঠিন। বাংলা সাহিত্যে বনফুল এই অণুগল্প রচনার কাজে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। অত ছোট জায়গায় অন্যান্য লেখকদের লেখা গল্প স্কেচের মতো হয়ে দাঁড়ায় — ঠিক ছোটোগল্প হয় না। বর্তমান লেখকেরও একটি বাদে (‘অপরাধ’) বাকি অণুগল্পগুলো তেমন সার্থক হয়নি।
নলিনী প্রামাণিকের গল্পগুলোয় স্থান করে নিয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্তদের নানা চরিত্র। কৃষক থেকে ঘরকন্নার কাজের মেয়ে, মুচি, রেলহকার, কেরাণী, স্কুল টিচার — বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন নিয়েই তাঁর গল্পগুলো। এদের জীবনের সুখ-দুঃখ, লড়াই-বিশ্বাসঘাতকতা, মানবিক বোধ-স্বার্থপরতা তাঁর গল্পে উঠে এসেছে। এবং তা খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে ‘যমজ’, ‘এক লাউ চারা’, ‘মালতী’, ‘দখল’, ‘শরিক’ গল্পে। গল্পকারের লেখায় শরৎচন্দ্রের প্রভাব (‘প্রেমের বিড়ম্বনা’) এবং সমাজবাদী রাজনীতির প্রভাব (‘দিদি’, ‘১১ই আগস্ট’ প্রভৃতি) আছে। এইসব গল্পগুলোয় এবং মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে গল্পগুলোয় (যেমন ‘দুর্ভিক্ষ’, ‘নারীর মূল্য’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’) আদর্শের কথাগুলো মোটা দাগে উঠে এসেছে।
অথচ লেখকের গল্প বলায় মুন্সীয়ানা আছে। ‘পরলোক’ এবং ‘ছিঃ’ গল্পে স্নানের ঘাটে বুড়োদের গল্পের মধ্যে দিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের উঁচু-নিচু মানসিকতা বেশ নাটকীয়ভাবেই উঠে আসে। অতিনাটকীয়তা এবং সমাজচেতনার দীর্ঘ বক্তৃতায় কখনো তা ভারাক্রান্ত (যেমন ‘পরলোক’ গল্পে ‘চাটুজ্জের’ সংলাপ)।
প্রসঙ্গত, এই গল্পগুলোর প্রথম দুটো চলিত ভাষায়, পরের দুটো সাধু ভাষায়, তারপর পাঁচটা চলিত ভাষায়, পরেরটা সাধু ভাষায় — এমনভাবে কেন?
গল্পগুলো কালক্রমিক সাজানো কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। একটা ভূমিকা থাকলে ভাল হত। ছাপার ভুলও আছে। লেখকের ‘নলিনী’ নামটা প্রচ্ছদে ও প্রথম পৃষ্ঠায় ‘নলিণী’ লেখা — কোনটা ঠিক?
তমাল ভৌমিক
Leave a Reply