সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ৩১ অক্টোবর#
গতকাল এবং আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা একটি গণভোটে অংশ নিল। ছাত্রছাত্রীদের পরিচালনায় হওয়া এই গণভোটে ২৯৭০ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ২৬০২ জন (৮৭ শতাংশ) অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। পাঁচটি প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ উত্তরের জন্য ভোট হয়। উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত — এই প্রশ্নে ২৪৯৭ জন (৯৬ শতাংশ) ‘হ্যাঁ’ বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আভ্যন্তরীন অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র’ পুনর্নির্মাণ করা উচিত — এই প্রশ্নে ২৫১৭ জন (৯৭ শতাংশ) ‘হ্যাঁ’ বলেছে। ১৬ সেপ্টেম্বরের পুলিশি নির্যাতন এবং যৌনহেনস্থার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে ২৫৫৩ জন (৯৮ শতাংশ) ‘হ্যাঁ’ বলেছে। ২৮ আগস্ট যৌনহেনস্থার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে ২৫২৭ জন (৯৭ শতাংশ) ‘হ্যাঁ’ বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সমস্ত ধরনের নজরদারি বন্দোবস্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ২৩৫৯ জন (৯০ শতাংশ) হ্যাঁ বলেছে।
আগামী ১০ এবং ১১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগে গণভোট হওয়ার কথা।
আগের খবর
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বহাল, ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের অসহযোগিতাও চলছে
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের ওপর রাতের অন্ধকারে লাঠিধারী পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া উপাচার্যের অপসারণের দাবি করেছিল। সরকার বাহাদুর তা নাকচ করে দিয়েছে। পদাধিকারবলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল বরং এই অস্থায়ী উপাচার্যকেই স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে সুপারিশ করেছে। উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনয়নের সার্চ কমিটিও এই সুপারিশ করেছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পুজোর ছুটির পর খুললেও উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না।
কলকাতা হাইকোর্টে এক শিক্ষকের করা একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র প্রতিবাদ করতে মানা করা হয়েছে, গেটগুলোতে সচিত্র পরিচয়পত্র সহ ঢোকার ব্যাপারে কড়াকড়ি করার কথা বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পুলিশ পোস্টিং করতে বলা হয়েছে। এসবই করা হয়েছে দ্রুত পড়াশুনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কথা বলে। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশ জারি করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। কিন্তু গেটগুলোতে ঢোকার ব্যাপারে এই নির্দেশ কার্যকর করা যাচ্ছে না। ১৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিকেলের দিকে। ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখালে পরে এই গেট খুলে যায়।
ছাত্রছাত্রীদের মূল দাবি মেনে যৌননিগ্রহের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনজন ছাত্রকে (ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের) জেলে পোরা হয়েছে আপাতত, তাদের শনাক্ত করেছে অভিযোগকারিণী। যদিও জেল-জরিমানা প্রভৃতি শাস্তিপ্রদানের মাধ্যমে যৌনহিংসা কতটা কমে তা প্রশ্নাতীত নয়। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরাও শাস্তির দাবি করেনি, ঘটনাটির তদন্ত দাবি করেছিল, পিতৃতান্ত্রিক ণ্ণরংবাজি’র অবসান দাবি করেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রী এবং তাদের কিছু সমর্থক অবশ্য দুর্গাপুজো এবং ঈদের উৎসবের পরিবেশের মধ্যেও উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শ্লোগান দেওয়া, পোস্টার প্রদর্শনের কর্মসূচি নেয় কলকাতার কয়েকটি জায়গায়। ৩ অক্টোবর বিধাননগরের লাবনি হাউসিং এস্টেটের সামনে সন্ধ্যেবেলা জমায়েত হলে পুলিশ বাধা দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে। ঘণ্টা দেড়েক পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ অক্টোবর খোলার পর কলা বিভাগ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাধারণ সভায় ছাত্রছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাস বয়কট চলবে। কর্তৃপক্ষের তরফে রেজিস্ট্রার শিক্ষক মহাশয়দের চিঠি দিয়ে ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ১৪ অক্টোবর এই নির্দেশের ধরনের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে আসে রেজিস্ট্রারকে। ১৬-১৭ অক্টোবর পুলিশি সন্ত্রাসের একমাস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চব্বিশ ঘন্টার অনশনে অংশগ্রহণ করে পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী। ১৮ অক্টোবর ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কট কিছুটা শিথিল করে।
Leave a Reply