শ্রীমান চক্রবর্তী, কলকাতা, ১৪ নভেম্বর#
দিবাকর মেমোরিয়াল এক্সপ্লোরার্স ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় পরিবেশ পরিসেবা, গঙ্গা মিশন ও এলআইটি-র সহযোগিতায় গঙ্গার দূষণ মুক্তির জন্য জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত সাইকেল র্যালি ছুঁয়ে গেল কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণের প্রান্ত। আমরা কলকাতাবাসী যখন শারদ উৎসবে মেতে ছিলাম ঠিক সেই দিনগুলিতেই মধুমিতা নস্কর (১৪ বছরের কিশোরী), প্রমিত চক্রবর্তী (১৪ বছরের কিশোর), অবসরপ্রাপ্ত জুটমিলের শ্রমিক কার্তিক চন্দ্র মাইতি, দেবাশিস দাস এবং দিবাকর মেমোরিয়াল এক্সপ্লোরার্স ফাউন্ডেশনের সম্পাদক তাপস দাস সহ অন্যান্যরা (মোট ৪০ জন) সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন গঙ্গার দূষণ মুক্তির আবেদন নিয়ে বহমান গঙ্গার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত।
দাবিসনদ
- গঙ্গাকে রক্ষা করুন — তার উপনদীগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখুন
- কোনো রকম ময়লা, প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থ নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন
- নদীতে পূজার ফুল ও উপকরণ ফেলা থেকে বিরত থাকুন
- নদী থেকে দূরে প্রাতঃকৃত্য সারুন
- নদীপাড়ে বসবাসরত গরিব মানুষের জন্য অবিলম্বে টয়লেটের ব্যবস্থা করুন
- কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ সরাসরি নদীতে না ফেলার বিষয়টি সুনিশ্চিত করুন
- চাষের মাঠে কীটনাশক ধোয়া জল নদীতে যাতে না আসে তা নিশ্চিত করুন
- শহরে ময়লা জল পরিশোধন করবার পরেই নদীতে ফেলুন
- গঙ্গাকে অবিরল ধারায় প্রবাহিত হতে দেবার জন্য একশো কিমি অন্তর বাঁধ দেওয়ার কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রত্যাহার করুন
কথা হল র্যালিতে যোগ দিতে আসা নস্করপুর সুকান্ত শিক্ষা নিকেতনের বিজ্ঞানের শিক্ষক দুলাল চন্দ্র কয়ালের সাথে। তিনি জানালেন, পুরো র্যালিতে তিনজন সাইকেল মেকানিকও যোগ দিয়েছিলেন। র্যালিতে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত লাগেজ বহন করার জন্য সাদারঙের টাটার ছোটোহাতি নেওয়া হয়েছিল।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৪০ জন মিলে র্যালি শুরু হয়েছিল সূদূর সেই উত্তরাখণ্ডে। কলকাতায় এই র্যালি এসে পৌঁছেছিল ৯ নভেম্বর। অবশ্য এই যাত্রাপথে শুরুতে যারা যোগ দিয়েছিল তাদের অনেকেই ব্যক্তিগত কারণে সম্পূর্ণ র্যালিতে থাকতে পারেনি, কিন্তু তাদের আন্তরিকতা বাকিদের থেকে কিছুই কম ছিল না। কলকাতার বাগবাজার ফেরিঘাটে সন্ধ্যেবেলায় স্থানীয় পৌরপিতা, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র সহ আরও অনেকের উপস্থিতিতে এই র্যালির অংশগ্রহণকারীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে র্যালির অন্যতম উদ্যোক্তা তাপস দাস সমগ্র র্যালিকে কেন্দ্র করে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তাঁর কথায় উঠে এসেছিল, গঙ্গা নদীর অবিরত ধারাকে বাধাহীনভাবে বইতে দিতে হবে এবং অবশ্যই গঙ্গা নদীর মধ্যে একশো কিমি অন্তর নদীবাঁধ দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প প্রত্যাহার করতে হবে।
দ্বিতীয়ত তিনি তেহরি বাঁধ এবং ফারাক্কা বাঁধ উভয়ের কারণেই যে গঙ্গার অবিরত স্রোতধারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে তার কথা গুরুত্ব দিয়ে বলেন। তাঁর কথায় উঠে এসেছিল, গঙ্গাকে কেউ দূষিত করবেন না, গঙ্গাকে কেউ দূষিত করতে দেবেন না। র্যালিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক দুলালচন্দ্র কয়ালকে প্রশ্ন করে জানা যায়, সমগ্র র্যালির জন্য ব্যয় হওয়া অর্থ মূলত অংশগ্রহণকারীদের স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগত অনুদানের থেকেই এসেছে। তবে যার যেমন সামর্থ্য সে সেরকম প্রদান করেছে।
Leave a Reply