৪ জুলাই, জিতেন নন্দী, বোলপুর##
আজ শনিবার। গিয়েছিলাম খোয়াইবনের অন্য হাটে। সকালে এসেছি শান্তিনিকেতনে। বর্ষার দিন। মাথার ওপর কালো মেঘ। মাঝেমাঝেই টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। দুপুরবেলায় সাইকেলে চেপে সোজা চলে গেলাম শ্যামবাটি ছাড়িয়ে ক্যানালের পাড়ে। ওখান থেকে ডানদিকে ঘুরে দেখি সোনাঝুড়ির বন। কিছুদূর যাওয়ার পর কানে এল বাউলের গান। চেয়ে দেখি সামান্য কয়েকজন কিছু পসরা সাজিয়ে বসেছে। এইটুকু ছোট্ট হাট? নাকি বর্ষার জন্য গ্রাম থেকে লোকে আসতে পারেনি? একজনে জিজ্ঞেস করতে বললেন, আর একটু এগিয়ে যান হাট দেখতে পাবেন। এগিয়ে গিয়ে দেখি, একটা বড়ো মাঠের চারদিকে গোল হয়ে মাটিতে দোকান সাজিয়ে বসেছে প্রায় ৫০-৬০ জন। আরও কেউ কেউ সাইকেলে কিংবা স্কুটার-মোটরবাইকে চেপে আসছে দোকান করতে।
খোয়াইবনের এই হাট বসে প্রতি শনিবার। দুপুরবেলা বোলপুর আর আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিল্পী-কারিগর-দোকানদারেরা আসে এই হাটে। লালমাটি পুড়িয়ে কালোমাটির পুতুল, কাঠের পুতুল, নারকেলের মালা আর ফলের আঁটি আর বিচি দিয়ে বানানো পাখি-জন্তু-জানোয়ার, কাথাস্টিচের ব্যাগ, কাঠের বাঁশি, একতারা-দোতারা-ডুগডুগি, স্লেট পাথরের ওপর আঁকা ছবি, তাঁতের শাড়ি, পুঁতির মালা-চুড়ি, আরও কত কীই না বিক্রি হচ্ছে। তার সঙ্গে আছে চা আর পিঠে-পুলি সহ নানান সুস্বাদু খাবার।
তবে এই হাটের মধ্যে একটা দৃষ্টিকটু জিনিসও রয়েছে। শান্তিনিকেতন এখন বেশ অভিজাত টুরিস্ট স্পট। এই হাট এখন এক দ্রষ্টব্য স্থান। সারি সারি প্রাইভেট গাড়ি চেপে আসছে শহরের বাবু-বিবিরা। গ্রামের শিল্পী-কারিগররাও মোটা লাভের আশায় আজ তাদের মুখাপেক্ষী। কয়েকজন যুবককে দেখলাম, হাটের একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় থাকো? — বোলপুর। আসলে হাট বলতে অতীতে স্থানীয় মানুষের মেলামেশা ও বিনিময়ের যে ঐতিহ্য ছিল, আজকের হাট সেখান থেকে সরে গেছে।
শুনেছি ২০০৩ সাল থেকে এই হাট বসছে। তবু এই হাটের মধ্যে রয়েছে সরল গ্রামীণ জীবনের একটুকু ছোঁয়া।
Leave a Reply