অমিতাভ সেন, কলকাতা, ৩১ আগস্ট#
শহরে ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বেড়েছে খুঁটিপুজোর হুজুগ। পুজোর তিন চার মাস আগে থেকেই বড়ো খুঁটির আশেপাশে জড়ো হয়েছে রুপালি পর্দার নায়ক নায়িকা। তারই নকলে ছোটো গলিতে ঢ্যাঙা বাঁশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে রঙ বেরঙের কাপড়ের টুকরো। যেন আকাশ থেকে ঢ্যাঁড়া পিটছে। এই ভাদ্র মাসে দু-এক পশলা বৃষ্টি, আষাঢ় শ্রাবণ জল হল না তো। জলের জন্য ধান রুইতে পারছে না বলে কপাল চাপড়াচ্ছে যারা, তারা আর এ শহরে আসছে কোথায়। বড়ো জোর হাসপাতালে। বড়ো রাস্তায় টাঙানো ব্যানার তাদের খেল দেখাবে পুজোয় এনে। ব্যানারে লেখা আছে, এবার পূজোয় …, অগ্রদূত উদয় সংঘ, সভাপতি মাননীয় সাংসদ মদন মিত্র। টাকার পুজো। যত বেশি টাকা, তত বড়ো পুজো। তার জলুষ দেখবে তখন। এখন হাসপাতালে মাইকের গলা ভেঙে গেল মৃত্যুঞ্জয় বলে ডেকে ডেকে। সকাল পাঁচটা থেকে লাইন দিয়েও অসুস্থ বাবাকে বেঞ্চে শুইয়ে রেখে এগারোটায় তার যখন ডাক পড়ল, সে ছেলে তখন জল খেতে গিয়েছে। গলা শুকনো, মুখ শুকনো, নিজেকেই তখন তার রোগী মনে হচ্ছিল। ডাক্তারের ঘরের সামনে উপচে পড়া রুগীদের সঙ্গে রুগীদের আত্মীয়স্বজনের প্রায় একই হাল। তাদের একজন মন্তব্য করল, তাকে এখন কোথায় পাবে। সে এখন মশান নাচ দেখতে গেছে। মশান নাচ ঠিক মশার নাচ নয়, মশা নিয়ে নাচ। নাচ গান নাটকে ম্যালেরিয়া ঠেকানোর জন্য জনচেতনা বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকারের তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিকেরা। হাসপাতাল জুড়ে তারা মাইক লাগিয়ে প্রচার করছে, কী করে মশা ঠেকাবেন। অতএব মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের বদলে ডাক পড়ল রতন আদকের। বাদ মানে আবার সোমবার আসতে হবে। তা হোক। মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের বদলে রতন আদক তো আজ জায়গা পেল। জামাই তার শ্বশুরকে হাসপাতালে ভর্তি করে ঘরে ফিরবে। টাকা জমা দিয়ে রোগীকে ভর্তি করতে বেজে গেল বিকেল চারটে। সব জায়গায় মারাত্মক লাইন। হবেই তো। পিজি হাসপাতাল সবচেয়ে বড়ো হাসপাতাল। কাছের গলিতে এক দোকানে ঢুকে সকাল থেকে শুধু চা আর বিস্কুট খাওয়া, মুখ চোখ শুকিয়ে যাদবপুর থানার মোড়ে পৌঁছতে সন্ধ্যে লেগে গেল। সেখানে থানার মোড়ে অটোওয়ালাদের বিক্ষোভ চলছে। অটো বন্ধ। জামাইয়ের কাঁধে মোটা ব্যাগ। গড়িয়া পর্যন্ত অটো পেলে ভালো হয়। ফাঁকা ফাঁকা অটো চলে যাচ্ছে, কেউ যাবে না। দু-চারজনকে অনুরোধ করার পর জামাই একটু রেগে গিয়েছিল। তার সঙ্গে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাও অটো খুঁজছিলেন। তাঁরাও বিরক্ত। বয়স্ক ভদ্রলোক এক অটো ড্রাইভারকে ডেকে বললেন, ভাই, মন্ত্রী তো বলেছেন যাত্রীদের সাহস করে অটোওয়ালাদের চাপ দিতে হবে। এখন আমি যদি তোমার নাম্বারটা নিয়ে মদন মিত্রকে পাঠিয়ে দিই। জামাই ভেবেছিল, অটোওয়ালা খুব রেগে গিয়ে ভদ্রলোককে যা তা বলবে। ওমা, সে বলে কিনা, খেলা চলছে খেলা। খুব ঠাণ্ডা গলায় কথাটা বলে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে অটো সরে পড়ল।
Leave a Reply