দুর্গাপুজো আমাদের চারপাশের সবচেয়ে জাঁক করা উৎসব, সন্দেহ নেই। এর আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় আর সব উৎসব, রান্নাপূজো থেকে ঈদ, অথচ এই উৎসবটির আশেপাশেই হয় সেগুলো। দুর্গাপুজো তো চিরকালই বারোয়ারি, কিন্তু ঢাকা পড়ে যাওয়া উৎসবগুলি বাড়ি বাড়ি চলে। আয়োজন নিজস্ব। নিজেদের ব্যাপার। তাই আমাদের মনেও দুর্গাপুজোই পুজো।
আমাদের বাড়িতে ঠিকে কাজ করে যে মেয়ে, সে আজ কয়েক মাস হল বলে যাচ্ছে, শাড়ি বা টাকা না দিয়ে পুজোতে মোবাইল সেট দেওয়ার কথা। পুজোতে কী পাওয়া যাবে বাবু-বাড়ি থেকে, কী পাওয়া যেতে পারে, তা ঠিকে কাজ করা মেয়েদের আলোচনার একটা বড়ো অংশ জুড়ে থাকে। শহরে দোকানে বাজারে যারা কাজ করে, পুরসভার ময়লার গাড়ি বা গ্যাসের যোগান দেয় যারা, তাদের চিন্তা বকশিস। খদ্দেরদের কাছ থেকে। আর মালিকের কাছ থেকে বোনাস।
আমি যে দোকান থেকে মুদির বাজার করি, সে পুজোর সময় একটা তেলেভাজার দোকান দেবে তার মুদিখানার দোকানের সামনে। শুধু সে নয়, অনেকেই পুজোর সময় পসরা সাজিয়ে বসবে, রাস্তার দু-ধারে। তাদের কারো ছোটো দোকান আছে, কেউ হকার। কারখানায় কারখানায় আসবে পুজোর বোনাস, নিদেনপক্ষে অ্যাডভান্স।
এরা তো কাজ করে। আর এক ধরনের লোকও আছে, যারা চাকরি করে। তাদের কাছে পুজো মানে ক-দিনের ছুটি।
দুর্গাপুজো নামের জাঁকজমকওয়ালা বারোয়ারি উৎসব কেজো লোকের কাছে গুছিয়ে নেওয়ার মওকা। খুব বেশি হলে একটু দেখতে বেরোনো। না বেরিয়ে টিভিতেও দেখে নেওয়া যায়। মোবাইলে ‘হ্যাপি পুজো’ বলে দেওয়া। এ পুজো কোনোভাবেই তার নিজের নয়। যত দিন যাচ্ছে, তত তা দূরের হচ্ছে। জাঁকও বাড়ছে।
Leave a Reply