- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

কুডানকুলামে পরমাণু চুল্লির অহিংস ‘দখল’ ভাঙতে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, গুলি; মৃত একাধিক — সরাসরি

মুথুভেল জানাকরাজন , সতীশ এবং জোসেফ জন সুন্দর-এর লাইভ রিপোর্ট http://www.dianuke.org থেকে. ছবি অ্যান্টনি কেবিস্টন ফার্নান্ডো-র#

১০ সেপ্টেম্বর কুডানকুলামে কী ঘটেছিল ? দেখুন এখানে

মঙ্গলবার ১১ সেপ্টেম্বর

রাত ১০.০০। খবর পাওয়া যাচ্ছে, আজ রাতেই ইদিনথাকারাই আক্রমণ করতে পারে পুলিশ। ইদিনথাকারাই গ্রামে গ্রামবাসীদের সভা চলছে, কিভাবে সেই আক্রমণের মোকাবিলা করা হবে।ইদিনথাকারাই গ্রামের মুখে পুলিশ ব্যারিকেড করে আছে। কিছু ঢুকতে দিচ্ছে না গ্রামে। দিল্লীর দুর্নীতি বিরোধী এনং তথ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ইদিনথাকারাই গ্রামে পৌঁছেছেন বলে জানা যাচ্ছে। উদয়কুমার সহ অন্যান্য নেতারা নিরাপদ রয়েছে। ইদিনথাকারাই গ্রামকে বাঁচানোর জন্য উদয়কুমার সহ অন্যান্য নেতারা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা রাজি হয়নি। এক আবেগপূর্ণ, দীর্ঘকালব্যাপী চলা সভায় ইদিনথাকারাই-এর মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আগে সবাই গ্রেফতার হবে, তারপর তাদের নেতারা গ্রেফতার হবে।

১১ সেপ্টেম্বর ইদিনথাকারাই গ্রামের সভায় সিদ্ধান্ত, আগে সমস্ত গ্রামবাসী গ্রেফতার হবে, তারপর তাদের নেতারা গ্রেফতার হবে।
কলকাতায় কলেজ স্ট্রীটে কুদানকুলামে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি নিপীড়ন ও জ্বালানি ভরার তোরজোড়ের প্রতিবাদ। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২। ছবি পাভেল চক্রবর্তী।

সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় গুলিচালনার প্রতিবাদে এবং কুদানকুলাম প্রকল্পে ইউরেনিয়াম জ্বালানি ভরার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে বিক্ষোভ হয়েছে। কলকাতায় কলেজ স্ট্রীট কফি হাউসের সামনে পোস্টার, স্লোগান সহ বিক্ষোভ সংগঠিত হয় বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ লিফলেট বিলি করা হয় কুদানকুলামের জনপ্রতিরোধের সমর্থনে। বিক্ষোভ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি পুলিশের গাড়ি চলে আসে এবং সারাক্ষণ বিক্ষোভের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

আজ সুপ্রিম কোর্টে কুদানকুলাম প্রকল্পে জ্বালানি সংযোগে স্থগিতাদেশ চেয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। আবেদন করেহেন শ্রী প্রশান্ত ভূষণ। ৩১ আগস্ট ২০১২ তারিখে মাদ্রাজ হাইকোর্ট একটি রায় দেয়, তাতে কুদানকুলাম প্রকল্পে জ্বালানি ভরার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই আবেদন। আবেদনের কপি এখানে পাওয়া যাবে।

সোমবার ১০ সেপ্টেম্বর

রাত ১০.০০। শুধু কাঁদানে গ্যাস নয়, গুলিও চলল পরমাণু বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর। থুথুকুড়ি-র মানাপাদু গ্রামে পুলিশ অ্যান্থনি সামি নামের এক প্রতিবাদী মৎস্যজীবীকে পেটে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলেছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, একজন বাচ্চা মেয়ে মারা গেছে পদদলিত হয়ে। একবছর আগে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এই প্রথম পুলিশ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ইদিনথাকারাই গ্রামে ঢোকে এবং প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে তল্লাসী চালায় উদয়কুমার এবং অন্যান্য নেতাদের খোঁজে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি কারোর ঘরে উদয়কুমারদের পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে। অসমর্থিত সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, উদয়কুমারদেরকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, কিন্তু মাথা নিচু করে নেওয়ার কারণে তারা বেঁচে যায়। সারা দক্ষিণ তামিলনাড়ু জুড়ে ইতিউতি প্রতিবাদের খবর শোনা যাচ্ছে, পরমাণু বিরোধী আন্দোলনের ওপর এই পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে। প্রায় ৫০ জন গুরুতর আহত বলে জানা যাচ্ছে। ইদিনথাকারাই চার্চের সামনে ১৪ জন অনশন শুরু করেছে বলে খবর। কুদানকুলামে সরকার সমস্ত ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ফলে কুদানকুলাম থেকে সরাসরি খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘পরমাণু বিদ্যুৎ বিরোধী প্রচার আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং মানবাধিকার কমিশনের কাছে ফ্যাক্স মারফত এই পুলিশি বর্বরতার নিন্দা করা হয়েছে। দিল্লিতে ধর্না অবস্থান হয়েছে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে। আগামী কাল কেরালার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভা হবে। বিকেলে ত্রিভান্দ্রাম প্রেস ক্লাবে কুদানকুলাম আন্দোলনের ওপর মানিলা মোহনের বানানো একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হবে। উদ্বোধন করার কথা কেরালার বিক্ষুদ্ধ সিপিএম নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন-এর। সকালে ত্রিভান্দ্রাম সেক্রেটারিয়েটে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হবে।

নিচের ছবিতে জেভিয়ার আম্মা, মৎস্যজীবী পরিবারের পরমাণু বিরোধী আন্দোলনের কর্মী, তাঁকে আজ একাধিক পুরুষ পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই জেভিয়ার আম্মা কলকাতায় ৬ আগস্ট পরমাণু বিরোধী সেমিনারে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্য সরাসরি তামিল থেকে অনুবাদ করে প্রচার করা হয়েছিল সেখানে, তার হুবহু বেরিয়েছিল সংবাদমন্থনের পাতায় এবং ওয়েবসাইটে। সেই বক্তব্য পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। অসমর্থিত সূত্রের খবর, আরেক মহিলা কর্মী মেলট্রেড-ও গ্রেফতার হয়েছেন। তিনিও কলকাতায় ওই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন তামিল ভাষায়। তার ছবি এবং সেমিনারে বলা বয়ান-ও আছে ওই রিপোর্টে।

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আয়ার একটি চিঠি লিখেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে :

আমি একটি চিঠি পেয়েছি ইদিনথাকারাই গ্রাম থেকে, যেখানে আপনার ‘কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনী’-কে পাঠানো হয়েছে সেখানকার শান্তিপূর্ণ পরমাণু-বিরোধী আন্দোলনকে ভাঙার জন্য। আমি অনেক দিন থেকেই বলে আসছি, পরমাণু প্রকল্প, তা সে ছোটোই হোক বা বড়ো, তা আমাদের জন্য সঠিক পথ নয়। ‘সৌরবিদ্যুৎ চাই, পরমাণু বিদ্যুৎ কখনও নয়’ — এটাই আমাদের কেরালা এবং তামিলনাড়ুর জন্য স্লোগান হওয়া উচিত। আপনি অতি দ্রুত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভাঙতে যাওয়া সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করুন। কারণ, প্রতিরক্ষা বাহিনী মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, গান্ধীবাদী সত্যাগ্রহ ভাঙার জন্য নয়। প্রিয় অ্যান্টনি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আপনার কর্তব্য করুন, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে নয়।

দুপুর ১২.৫০। পুলিশের অত্যাচার থেকে প্রাণ বাঁচাতে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে মানুষ। আশেপাশের গ্রামের কিছু মানুষ নৌকায় করে এসে মহিলা ও শিশুদের নৌকায় তুলে নিয়েছে। ইদিনথাকারাই গ্রামে হিংসাত্মক পরিস্থিতির খবর মিলছে। মহিলা ও শিশুরা প্রাণ বাঁচাতে স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এনডি টিভিতে সরাসরি ছবি দেখানো হচ্ছে। সেন্ট লুড্রেস চার্চের সামনে ২০০০ পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।

সকাল ১১.৪৫। পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়া শুরু করেছে। লোকে দৌড়চ্ছে সমুদ্রের দিকে। উদয়কুমার এসএমএস করে জানিয়েছেন, প্রশাসন নৌবাহিনী নামিয়ে চড়াও হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

একাধিক পুরুষ পুলিশের কবলে পরমাণু বিরোধী মৎস্যজীবী পরিবারের মহিলা জেভিয়ার আম্মা। ৬ আগস্ট কলকাতায় একটি সেমিনারে উনি বক্তব্য রেখে গেছেন।

সকাল ১১.০০। প্রচুর পুলিশ গ্রামবাসীদের ‘দখল’-এর নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে রয়েছে লাঠি হাতে। তার পেছনেই আছে কাঁদানে গ্যাসের পুলিশ বাহিনী। ওদিকে চেন্নাই-এর এনপিসিআইএল-এর অফিসের সামনে তথ্য অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা জমায়েতের ডাক দিয়েছে বিকেল তিনটেয়। দিল্লীতে তামিলনাড়ু ভবনের সামনে বিকেল তিনটেয় বিক্ষোভ সমাবেশ।

সকাল ৯.০০। সারারাত ধরে বালির ওপর খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছে হাজার হাজার মানুষ, শিশু ও মহিলা। কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লির পূর্বদিকের দেওয়ালের অনতিদূরে সমুদ্রের ধারে। মাঝরাতে একবার একটা গুজব উঠেছিল, পুলিশ আন্দোলনের নেতৃত্বকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তা সত্য নয়। আন্দোলনের নেতৃত্বের ওপর দেশদ্রোহিতা সহ কয়েকশ’ মামলা দায়ের করে রেখেছে প্রশাসন। মানুষ বুক দিয়ে আগলাচ্ছে তাদের।আন্দোলনকারীরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নয়, তারা চায় মুখ্যমন্ত্রী এসে বলুক, আপাতত চুল্লিতে জ্বালানি ভরার কাজ বাতিল। তাছাড়া এখানকার আশেপাশের এলাকাতে গত এগারো মাস ধরে মানুষের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে পুলিশ। সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হোক, যাতে সাধারণ মানূষ এখানে নির্ভয়ে আসতে পারে, অবস্থান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের খাবার জল ইত্যাদি দিতে পারে।

আন্দোলনের নেতা উদয়কুমার ডায়ানিউকের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, সরকার অবিলম্বে এই সর্বনাশা পরমাণু চুল্লি প্রত্যাহার করুক। এখানে উপস্থিত পঁচিশ হাজার লোক তামিলনাড়ুর বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করার জন্য সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে তারা নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের প্রকল্পের কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দেবে, বিদ্যুৎ সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করবে।

রবিবার ৯ সেপ্টেম্বর

রাত ১০.০০। কুদানকুলাম প্রকল্পের পূর্ব দিকের দেওয়ালের পাশে সমুদ্রের তীরে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে হাজার হাজার গ্রামবাসী, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, মহিলা…। পুলিশ নেই। এলাকাটিতে জেনারেটর দিয়ে আলো দেওয়া হয়েছে। রাতের সামান্য খাবারের বন্দোবস্ত হয়েছে। কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লি ‘দখল’ চলছে।

সারা দিনের গরম হাওয়ার পর সন্ধ্যে নেমেছে। হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রের ধারে বসে আছে, কেউ কেউ গেছে সারা দিনের খালি পেটের পর কিছু পেটে দিতে, এদিক ওদিক। প্রতিরোধে কিছুটা আলগা ভাব এসেছে। পুলিশ-ও কিছুটা হালকা, রুটিন কাজ করছে। আন্দোলনের নেতা উদয়কুমার বলেছেন,

আমরা সমুদ্রের তীরে কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লির দখল নিয়েছি। আমরা পেরেছি পুলিশকে এড়িয়ে, কোনও দুর্ঘটনা এড়িয়ে এতদূর চলে আসতে। আমরা সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি আমাদের সাথে কথা বলতে। অনুগ্রহ করে এখানে আমাদের দেখতে আসুন। আপনাকে আমাদের দরকার।

সন্ধ্যে ৬.০০। কুদানকুলামের ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের সমর্থনে দোকান বন্ধ করে রেখেছে। প্রায় চার হাজার কুদানকুলামবাসী কুদানকুলামের আর সি চার্চের সামনে জড়ো হয়েছে।

বিকেল ৪.৪৫। পূর্ব দিকের দেওয়াল থেকে পুলিশবাহিনী কমিয়ে দিয়ে তাদের পরমাণু চুল্লির গেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকার তার পুরনো নোংরা খেলাটাই খেলতে শুরু করছে —অহিংস প্রতিবাদ আন্দোলনকে পাত্তা না দেওয়া। আন্দোলনকে হিংসাত্মক হতে প্ররোচিত করা। কিন্তু শাসক এবং নয়াকুলীন সমাজ গান্ধীবাদী আদর্শ পরিত্যাগ করলেও ভারতবর্ষের গরীব মানুষ তা করেনি। তাই শান্তিপূর্ণভাবেই পরমাণু প্রতিরোধ চলবে।

দুপুর ৪.০০। মিছিল ও জমায়েতের প্রচুর ছবি ডায়ানিউক ডট অর্গ থেকে। সংবাদসংস্থা পিটিআই সহ প্রায় সমস্ত জাতীয় সংবাদমাধ্যম কুদানকুলামের মানুষের এই পরমাণু বিরোধী ব্যাপক জমায়েতকে হয় খবর থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে বা কমিয়ে দেখাচ্ছে। দি হিন্দু তাদের ওয়েবসাইটে আজকের মিছিলের কোনও সরাসরি আপডেট দিচ্ছে না। পিটিআই বলছে, এক হাজারের কিছু বেশি মানুষ জমায়েত হয়েছে।

দুপুর ৩.১৫। কুদানকুলাম চুল্লির পূর্বদিকের দেওয়ালের কাছে অস্থায়ী তাঁবু বানাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত করারও চেষ্টা করা হচ্ছে। খারাপ আবহাওয়া সমস্ত চেষ্টাতেই বাধ সাধছে। পুলিশ বেশ কিছু গাড়ি জুটিয়ে এনেছে। গ্রেফতার করার তোরজোড় নাকি? মানূষ সতর্ক হচ্ছে।

দুপুর ২.১৫। ঢেউ বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে লোকসমাগম। খাবার জল দেওয়া হয়েছে মানুষকে। খাবারের প্যাকেট দেওয়ার কথা হচ্ছে। গরমে মানুষ একটু ছায়া খুঁজছে। শোনা যাচ্ছে, জেলাশাসক এসেছেন। তিনি উদয়কুমারকে খুঁজছেন তার সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু লোকে চাইছে, প্রশাসনিক কর্তারা সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলুক।

দুপুর ১.৩০। জোয়ার শুরু হয়েছে। আবহাওয়া একটু ভালো হওয়ার দিকে। কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লির পূর্বদিকের দেওয়াল থেকে শুরু করে ইদিনথাকারাই-এর পশ্চিম দিকের থুনদিল পালাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে মানুষের ঢল। কুদানকুলামের গ্রামগুলি থেকে এখনও আসছে মানুষ। তিরুনেলভেলির পুলিশ সুপার ভিজয়েন্দ্র বিদারি মেগাফোনে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কিছু শোনা যাচ্ছে না।

সকাল ১২.৫০। প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ সমুদ্রের তীরে, পূর্ব দিকের দেওয়ালের থেকে ৫০ মিটার দূরে। তিন হাজার পুলিশ জায়গাটা পাহারা দিচ্ছে। কুদানকুলাম থেকে লোকে জমায়েত হতে শুরু করেছে। পুলিশ এখানে হাল ছেড়ে দিয়েছে, কুদানকুলামের মানুষকে আসতে সহায়তা করছে। কিন্তু খবর মিলছে, পেরিয়া থালাই গ্রাম থেকে ইদিনথাকারাই গ্রামে মিছিলে যোগ দিতে আসা কয়েক হাজার মানূষকে আটকে দিয়েছে পুলিশ। ফলে সেখানকার লোকে এখন তুতিকোরিনের পানি মায়া মাধা চার্চের সামনে অনশনে সামিল হয়েছে। তুতিকোরিনের মৎস্যজীবীরা ওখানে আগে থেকেই একটি অনশনে সামিল রয়েছেন।

সকাল ১২.১৫। কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লির পূর্ব দিকের দেওয়ালের গায়ে থাকা পুলিশ ব্যারিকেডের ১০০ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে জনতা। উদয়কুমার তাদের বসে পড়তে বললেন সমুদ্রের তীরে।

সকাল ১১.৪০। মিছিল এখন কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লির পূর্ব দিকের দেওয়ালের থেকে কয়েকশ’ ফুট দূরে। উদয়কুমা, পুষ্পরায়নরা প্রথমে আছে। তারপর বাচ্চারা, মহিলারা, পুরুষেরা। এক পা সমুদ্রে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল জনতা। গরম আবহাওয়া।

সকাল ৭ টার মধ্যেই আশেপাশের গ্রামগুলি থেকে সমুদ্রপথে নৌকায় করে হাজার পাঁচেক গ্রামবাসী চলে এসেছে ইদিনথাকারাই-এ। এখান থেকে কুদানকুলাম পরমাণু চুল্লির দিকে মিছিল শুরু হওয়ার কথা ন’টা নাগাদ। ইদিনথাকারাই এর সেন্ট লুর্ডস চার্চের কাছে জমা হয়েছে মানুষ। সকাল ন’টার সময় শুরু হওয়ার কথা ছিল মিছিল, শুরু হল বেলা এগারোটায়। তার আগে যুব কমিটিগুলি নিজেদের মধ্যে বসে নিল, কিভাবে এই মিছিল সুসংগঠিত ভাবে করা যায়, তা ঠিক করে নেওয়ার জন্য। তারপর চার্চে প্রার্থনার পর শুরু হল মিছিল। মিছিল শুরুর সময় বক্তব্য রাখলেন এস পি উদয়কুমার। প্রায় তিরিশ হাজার মানুষ চলতে শুরু করল পরমাণু চুল্লির দিকে। সেখানে যে কোনও দিন পরমাণূ জ্বালানি পুরে দেওয়া হতে পারে, শুরু হয়ে যেতে পারে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন। আশেপাশের গ্রামগুলিকে তা ঠেলে দেবে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তার প্রতিবাদে আজ কয়েক যুগ ধরে চলা পরমাণু বিরোধী লড়াই-এর ডাকেই আজকের এই মিছিল।