দীপঙ্কর দে সরকার, কোচবিহার, ২৯ জুন#
সম্প্রতি কোচবিহার জেলায় মাছের আকাল চলেছে। বছরের এই সময়টা এমনটি হবার কথা ছিল না। কোচবিহার শহরের পাঁচটি বাজারের খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল এমন আকাল আরও বেশ কিছুদিন চলবে। কেন এমনটা হল? জিগগেস করতেই উত্তর এল আবদার আলির কাছ থেকে। আমি বাজারে এলেই আবদার চাচার কাছ থেকে মাছ কিনি। আবদার চাচা গত চল্লিশ বছর ধরে মাছের কারবার করছেন কোচবিহার শহরের রাসমেলা ময়দানের পাশের দেশবন্ধু বাজারে। প্রাক বর্ষার বৃষ্টি সত্ত্বেও এমন মৎস্য সঙ্কট সত্যি বিরল। গতকাল দেশবন্ধু মাছের বাজারে মাছ নিয়ে আসা বিক্রেতাদের কাছে খুব সামান্যই স্থানীয় মাছ দেখতে পেলাম, এরপর বাজার ঘুরে শেষপর্যন্ত আমি আবদার চাচার কাছে গিয়ে বললাম,\\
— চাচা, মাছে তো হাতই দেওয়া যাচ্ছে না, ট্যাংরা-পাবদা ৬০০ টাকা। শিঙ্গি মাগুর ৭০০ টাকা, দারকা পুঁটি ৩০০ টাকা, এমনকী ৫০ গ্রাম ওজনের বাটা পর্যন্ত ৩০০ টাকা কেজি দরে হুহু করে বিক্রি হচ্ছে।\\
— কিছু করনের নাই। নিতে হইলে ওই দরেই নিতে হইবে। আমরা সবাই অনেক দর দিয়াই কিনা আনছি।\\
— তাই বলে এত বেশি দাম?\\
— কি করন যাইব? মাছ-ই তো নাই।\\
— কেন এই সময়ে মাছ তো থাকার কথা, কিন্তু কেন নাই?\\
— তা বলতে পারুম না, কিন্তু লোকে কয় ভূটান পাহারের ডলোমাইট বৃষ্টির জলে ধুইয়া আইসা মাছের বারোটা বাজাইতেছে।\\
— সে না হয় নদীতে মাছ কমেছে, বৈরালী মাছ আর আগের মতো পাওয়া যায় না, তা বলে কি পুকুরের চাষের মাছও থাকবে না?\\
— কি কইরা থাকব? জমিতে যে বিষগুলান ঢালা হয়, তার অ্যাকশন নাই? মাছ যা পুকুরে ছাড়া হয় তার সিকিভাগও টেকে না।\\
— কিন্তু আরও অনেক মাছ আছে যা দু-তিন বছর আগেও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যেত, যেমন ধরো পুঁটি, মৌরলা, কাকিলা, চাপিলা, ট্যাংরা, কলাগাছি, খলিশা, ভ্যাদা, সাঁটি, কৈ, মেনি। এরা গেল কোথায়?\\
— কী কই? এই মাছগুলান ডিম পাড়নেরই সুযোগ পায় না, তো মাছ হইব ক্যামনে? ডিমগুলান সব মাছের সঙ্গে পাবলিকের প্যাটে যায়। তাছাড়া চাইরদিক এমন হইছে ডিম পাইরলেও সব মনে হয় বাঁচে না।\\
— আচ্ছা চাচা এইগুলা বন্ধ কইরা আবার স্থানীয় মাছে বাজার ভরন যায় না?\\
— ক্যাড়া বন্ধ করব?\\
— কেন? সরকার?\\
আবদার চাচা শুনে একটু ম্লান হাসি হাসলেন। আমি সে হাসির মধ্যে আর যাই হোক, আশার কোন রূপালি রেখা অন্তত দেখতে পেলাম না।
Leave a Reply