• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

কিস্তির টাকা দিতে পারলে তো ভালোই হত। প্রতি সপ্তাহে এইভাবে কথা শুনতে হত না

July 16, 2020 admin Leave a Comment

শোভা ধনী। শান্তিপুর। ১৬ জুলাই, ২০২০। #

শান্তিপুরে দত্তপাড়া মাঠের পূর্বদিকে বেশ কিছু টালি ও টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি। রাস্তার উপর স্তূপাকৃতি হয়ে আছে ময়লা, আবর্জনা। বাড়িগুলো নীচু। বৃষ্টির জলে সেই নোংরা আবর্জনা ধুয়ে নামছে বাড়ির উঠোনে। কথা হচ্ছিল ঝর্ণা ঘোষের বাড়িতে। ঝর্ণাদি তার বাড়ির বারান্দায় পাটি পেতে বসতে দিয়েছিলেন। আশেপাশের বাড়ির মহিলাদের তিনিই ডেকে এনেছিলেন।

ঝর্ণাদি বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলেন। সাপ্তাহিক কিস্তির পরিমাণ বারোশ’ সত্তর টাকা। সতেরটা কিস্তি শোধ করেছেন। মেয়ের বিয়ের জন্য লোন নিয়েছিলেন। বর্তমানে ঝর্ণাদি হাত-চরকায় সুতো পাকান। লকডাউন, ট্রেন বন্ধ, আর্থিক মন্দার কারণে শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির বেহাল দশা। মহাজন সুতো দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আপাতত বাড়িতে বসা। ঝর্ণাদির স্বামী স্থানীয় একটি বিল্ডার্সের দোকানে মাল বওয়ার কাজ করতেন। মালিকের সাথে বনিবনা না হওয়ায় লকডাউনের মধ্যে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন ভ্যান চালান। তাতেও আয় বিশেষ কিছু হচ্ছিলনা। দেখলাম ভ্যানটি তার বাড়ির উঠোনে রয়েছে। বর্তমানে কল্যাণী শহরে বিল্ডিং তৈরির কাজে গিয়েছেন। তবে সেখানেও নিয়মিত কাজ হচ্ছেনা। লকডাউনের জেরে মাঝেমধ্যেই কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কের কিস্তি শোধ করতে পারছেননা। ঝর্ণাদির বক্তব্য, কিস্তির টাকা দিতে পারলে তো ভালোই হত। প্রতি সপ্তাহে এইভাবে কথা শুনতে হতনা। এতদিন তো দিয়েই এসেছি। এখন কাজকর্ম নেই, কোথা থেকে দেব? ঝর্ণাদি’র মত চাপে রয়েছেন দত্তপাড়ার আরো অনেকেই। মোট তিরিশজন মহিলা একটি গোষ্ঠী তৈরি করে বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সকলেই দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষ। লকডাউনে কারো কাজকর্ম নেই। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এরপর এই সাপ্তাহিক ঋণ পরিশোধের বোঝা।

ঝর্ণাদি’র বাড়িতে ঢোকবার মুখেই কথা হল পম্পা দাসের সাথে। পম্পাদি’ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। সাপ্তাহিক কিস্তি এক হাজারের বেশি। এই প্রথমবার ঋণ নিয়েছেন তিনি। নিজের হাতে তাঁত বুনতেন। এখন তাঁত বন্ধ। তার স্বামী টোটো চালান। টোটোর ব্যাটারি কেনার জন্য লোন নিয়েছিলেন। লকডাউনে টোটো চালাতে পারেননি। টোটোর ব্যাটারি বসে গেছে। তার বাড়ির উঠোনে টোটোটি পড়ে আছে। সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা তাই দিতে পারছেননা। তিনি বলেছেন, ব্যাঙ্কের তরফ থেকে কোনো জবরদস্তি নেই। তবে কিছু পরিশোধ করতে হবে। তিনটি কিস্তির টাকা তিনি লকডাউনের আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে একটা কিস্তির টাকা শোধ করেছেন। এখনো আটচল্লিশটা কিস্তি বাকি রয়েছে।

যে ছেলেটা লকডাউনের কিছুদিন আগে একটা টোঙ খাটিয়ে তেলেভাজা আর ডেইলি লটারির টিকিট বিক্রি করতো, এই লোকহীন বাজারে সে এখন ঠেলায় চাপিয়ে শসা বিক্রি করছে। ৩ জুলাই তোলা ছবিটি ধীমান বসাকের ফেসবুক ওয়াল থেকে পাওয়া

ঝুনু দাসের সাথে কথা হল ঝর্ণাদি’র বাড়িতে। তিনি পঞ্চাশ হাজার টাকা লোন করেছেন। দু’বছরে শোধ করতে হবে। সাপ্তাহিক কিস্তির পরিমাণ পাঁচশ আশি টাকা। ছ’টা কিস্তি শোধ করেছেন। চলতি মাসে দুটো কিস্তি শোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। বন্ধন ব্যাঙ্কের সেভিংস একাউন্টে টাকা ছিল। সেখান থেকে টাকা তুলে এনে দিতে হয়েছে। ঝুনুদি’ও তাঁত বোনেন। এখন তাঁত বন্ধ। তাই বিড়ি বাঁধছেন। তার স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি। তারও কাজ নেই। ঊনিশ বছর ধরে বন্ধন ব্যাঙ্কের সাথে লেনদেন করছেন। এই প্রথমবার তিনি সময়মত কিস্তি দিতে পারছেন না। কাজকর্ম সচল হলে ব্যাঙ্কের টাকা অবশ্যই পরিশোধ করবেন।

ববিতা দাস প্রথমটায় ভয় পেয়েছিলেন কথা বলতে। ভেবেছিলেন বন্ধন ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তাকে বুঝি কিছু বলতে হবে। বুঝিয়ে বলাতে তিনি আশ্বস্ত হলেন। পনের বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধন ব্যাঙ্কের সাথে লেনদেন। বন্ধন ব্যাঙ্কের থেকে লোন নিয়ে বাড়িঘর করেছেন। পাঁচটি সন্তান। বড় তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ছেলে ও মেয়ের প্রাইভেট টিউটরদের মাইনে বৎসরান্তে ব্যাঙ্কের থেকে লোন নিয়ে শোধ করেন। রেডিমেডের ব্যবসা তার। এখন ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ। বিড়ি বাঁধতে শুরু করেছেন। সপ্তাহে দু’হাজার বিড়ি বাঁধলে তিনশ টাকা রোজগার হয়। ববিতাদি’র স্বামী মোটর মেকানিক। চাকদা’র বিষ্ণুপুরে মোটর গ্যারেজে কাজ করেন। ট্রেন বন্ধ হওয়ায় সাইকেল করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। তবে সেখানেও রোজগারপাতি বিশেষ হচ্ছেনা। তিনি এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা লোন নিয়েছেন। ছ’টা কিস্তি লকডাইনের আগেই শোধ করেছেন। সাপ্তাহিক কিস্তির পরিমাণ চোদ্দশ নব্বই টাকা। দু’বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তিনি হপ্তায় পাঁচশ টাকা করে দিতে পারবেন বলে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এই আংশিক পরিমাণ টাকা নেবেননা, পুরো কিস্তির টাকা দিতে হবে বলে চাপ দিচ্ছেন।

অপর্ণা দাস। পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা লোন নিয়েছেন। অপর্ণাদি’র স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সাপ্তাহিক কিস্তির পরিমাণ সাতশ পঞ্চাশ টাকা। লকডাউনের আগে তের সপ্তাহ কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছেন। ব্যাঙ্ক থেকে কিস্তির টাকা দেয়ার জন্য জোর করছে। চলতি মাসে তিনি একটা কিস্তির টাকা দিয়েছেন।

কথা শুনতে শুনতে সন্ধ্যা নেমে এল। শ্রাবণের আকাশ সবসময় মেঘে ঢাকা। তবুও সেই মেঘ সরে মাঝে মাঝে সূর্যের দেখা মেলে। কিন্তু এই মানুষগুলোর মুখে যে মেঘের ছায়া ঘন হয়ে এসেছে তা কবে কাটবে কেউ জানেনা। প্রত্যেক মানুষের একটা আত্মসম্মান বোধ আছে। ঋণের টাকার জন্য বাড়ি বয়ে ব্যাঙ্কের কর্মী তাগাদা দিয়ে যাবেন, এটা কারোরই ভালো লাগেনা। অসম্মানে লাগে। প্রত্যেকেই একই কথা বলেছেন, আমাদেরই কি ভালো লাগছে এভাবে কথা শুনতে ? কিন্তু কী করব? কাজকর্ম সচল না হলে কোথা থেকে টাকা দেব?

বেরিয়ে আসছি, রাস্তায় দেখা হল তাপসী দাসের সাথে। হাতে বোনা তাঁত বোনেন। তাঁত জোড়া আছে। কিন্তু মহাজন সুতো দিচ্ছেনা। একমাস পরপর সুতো দিচ্ছে। একটা কাপড় বুনলে একশ পঞ্চাশ টাকা মজুরি। স্বামী হোটেলে, মিস্টির দোকানে গ্যাস ডেলিভারির কাজ করেন। বেশিরভাগ হোটেল বন্ধ থাকায় কাজ বিশেষ হচ্ছেনা। পঞ্চাশ হাজার টাকা বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছেন। পঞ্চাশ সপ্তাহ কিস্তির টাকা শোধ করেছেন। এখনো চুয়ান্ন সপ্তাহ বাকি। ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি চাপ দিচ্ছেন কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য। তাপসীদি কাজকর্ম সচল হলে পুজোর পর টাকা শোধ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

১৫ জুলাই বন্ধন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত

Uncategorized আত্মসম্মান, করোনা, কিস্তির টাকা, বন্ধন ব্যাঙ্ক, মহিলাদের গোষ্ঠী, লকডাউন

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in