জিতেন নন্দী, কলকাতা, ১ ডিসেম্বর#
আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল নিউ আলিপুর কলেজের প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রীর। কথায় কথায় তার কাছ থেকে আমি ওই কলেজে ক্লাসের অবস্থাটা জানতে পারি। মেয়েটি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সমস্যাটা আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু এসব জিনিস ছাপার ব্যাপারে ওর ভয় রয়েছে। ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। আমি যতটা পারলাম, ওর কথাগুলো বিবৃত করছি।
‘আমি পাঁচ মাস আগে কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। ক্লাস প্রথমদিকে হচ্ছিল। মাঝে আমার যাওয়া হয়নি কলেজে, তখন সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা চলছিল। ইদানীং দেখছি, স্টুডেন্টরাও থাকতে চাইছে না। টিচাররাও … পাসের ক্লাস বলে। টিচার আর ছাত্র দুজনেরই দোষ আছে। ইংলিশ ম্যাম এসেও ক্লাস করাচ্ছেন না। অনার্সের ক্লাস মনে হয় রেগুলার হয়। ধরা যাক, তিনটে অবধি প্র্যাকটিকাল ক্লাস হল। এবার তিনটে থেকে তিনটে পঁয়তাল্লিশ একটা ক্লাস আছে। যদি ওই ক্লাসটা না হয়, তাহলে কারও আর থাকার ধৈর্য হচ্ছে না। তিনটে পঁয়তাল্লিশ থেকে চারটে পঁচিশ অবধি আর একটা ক্লাস। তারপরের ক্লাসটা হবে কিনা সেটাও আমরা জানতে পারছি না। যারা অনার্স করে, তারা তো সকাল সকাল আসে। অতটা গ্যাপ দিয়ে আবার তিনটের সময় ক্লাস, অনেকেই থাকে না। ফিজিক্স, ম্যাথ, কেমিস্ট্রি যেগুলো পাস সাবজেক্ট, সেগুলো একসঙ্গেই পাস আর অনার্স স্টুডেন্টদের ক্লাস থাকে। তারপর টিউশন আছে। যেসময় অবধি টিউশন আছে, ততক্ষণ কলেজে কাটিয়ে তারপর অনেকেই টিউশন করতে যাচ্ছে। পাসে যারা পড়ে তাদেরও অনেকেই বাইরে টিউশন পড়ে। ইদানীং দেখছি এই জিনিসটা। ক্লাস করতেও চাইছে না কেউ। একা জেদ করে বসে থাকলে লাভ নেই। পাঁচ-ছজন ছিল, তাও ক্লাস হয়েছে। এখন মনে হয় কলেজে কি একটা মিটিং-টিটিং চলছে। আগের দিন গিয়েছিলাম, তিনটে অবধি কোনো ক্লাস হয়নি। প্র্যাকটিকাল ক্লাসও হয়নি। কীসের মিটিং জানি না। কলেজে গেলাম, হয়তো একটা ক্লাস হল, তারপর বাড়ি চলে এলাম। একদিন গেলাম, কোনো ক্লাসই হল না। ইদানীং এই ব্যাপারটা হচ্ছে। বারোটায় একটা ক্লাস হল, তারপর তিনটেয় আর একটা ক্লাস। অতক্ষণ শুধু শুধু বসে থাকা। তারপর আবার তিনটে পঁয়তাল্লিশ। টিচাররা ভালোই বোঝান। তবে এরকম চললে সিলেবাসটা কমপ্লিট হবে কিনা। কী করব? বাড়িতে আমি নিজেই পড়ি। টিউশন নিই না। ইলেভেন-টুয়েল্ভের সঙ্গে মিল আছে। লাইব্রেরিতে বই পাওয়া যায়। এখন তো প্র্যাকটিকালেরও টিউশনি আছে। কলেজ মানে দাঁড়িয়েছে ওই একটা ইনস্টিটিউশনে থাকা।’
Leave a Reply