১২ ফেব্রুয়ারি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রী, পাহাড়পুর রোড, মেটিয়াব্রুজ#
আমি হরিমোহন ঘোষ কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পাশকোর্সে পড়ি। আগে আমাদের কলেজে এসএফআই ইউনিয়ন ছিল। আমি তখন কলেজে ভর্তি হইনি, দিদি পড়ত। এখন টিএমসিপি ইউনিয়ন। আসলে আমাদের কলেজের জিএস সঞ্জয়দা আগে এসএফআই করত, ‘পরিবর্তন’ হওয়ার পর টিএমসিপি হয়ে যায়। ও হিন্দিভাষী। তবে উর্দুভাষী ছেলেমেয়েই কলেজে বেশি। কলেজে সবচেয়ে বেশি জোর সিপি-র। কারণটা বলি। ওই যে মোক্তার বলে একজন আছে না, ও আগে সিপিএম ছিল, ‘পরিবর্তন’ এল তো কংগ্রেস হয়ে গেল। মানে কলেজে কংগ্রেসের (সিপি) সাপোর্টার বেশি।
আমাদের কলেজের টিএমসিপি-র লিডার হল ছোটুদা, মানে অভিজিৎ শীল। ও হল আমাদের এখানকার টিএমসি কাউন্সিলার রঞ্জিৎ শীলের ছেলে। ছোটুদা কলেজে পড়ে না। বাইরে থেকে লিডারি করে। এই তো তিন-চার মাস আগে ওকে এমন মেরেছিল সিপির ছেলেরা! সাপ্লি পরীক্ষার ফর্ম দিচ্ছিল, কী একটা গণ্ডগোল হল। ছোটুদাকে খুব মেরেছিল কংগ্রেসের ছেলেরা। আসলে কলেজে বাইরে থেকে প্রচুর ছেলে আসে। তারা কলেজে পড়ে না। খিদিরপুর কলেজ, মেটিয়াব্রুজ কলেজ সব জায়গা থেকে ছেলে আসে। কে কাকে কী বলবে? শুধু পরীক্ষার সময় বোঝা যায় কে কলেজে পড়ে।
একটা ঘটনা বলি, আমি যখন প্রথম প্রথম কলেজে গেছি, ওপরের ঘরে সিপির একটা ছেলে একটা মেয়ের সঙ্গে গল্প করছিল। ওখানে আমাদের হিস্ট্রির টিচার এসএস ম্যাম গেছেন। উনি বললেন ছেলেটাকে, ‘তুমি এখানে কী করতে এসেছ? যাও, আমি ক্লাস নেব।’ ছেলেটা বলল, ‘না যাব না।’ ম্যাম বললেন, ‘কী করতে কলেজে আসো?’ ছেলেটা জবাব দিল, ‘আপনি কী করতে কলেজে আসেন। আপনি যান, আমি এখানেই থাকব।’ এইরকম ওদের ক্ষমতা!
আজকে তো ইউনিয়ন ইলেকশনের নমিনেশন ফর্ম দেওয়ার কথা ছিল। টিচাররা ফর্ম দেয়। সিপির তিনটে ছেলে ফর্ম তুলে নিয়েছিল। সেটা জানাজানি হয়ে যায়। টিএমসিপিও প্রচুর ফর্ম তুলেছে। কিন্তু ওরা ঠিক করেছিল কলেজে সিপির ছেলেদের ফর্ম তুলতে দেবে না। এসএফআইয়ের ছেলেরা তো সব টিএমসিপি হয়ে গেছে, তাদের কেউ ছিল না। ওই তিনটে ছেলে কমনরুমে ঢুকে ফর্ম তিনটে অন্যদের হাতে পাচার করে দিয়েছে। তারপর টিএমসিপির ছেলেরা ওদের ধরে সার্চ করে, দেখে ওদের ব্যাগে ফর্ম নেই। এরপর তো গণ্ডগোলটা হল।
এর আগে ছোটুদা আমাদের বলেছিল, যারা ফিজ দেয়নি, তাদের ফিজের টাকা ক্লিয়ার করে দেবে টিএমসিপি, যাতে তারা নমিনেশন ফর্ম তুলতে পারে। ফিজ বুক আর আই কার্ড দেখে ফর্ম নিতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল।
ক-দিন ধরেই বোমের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। গতকাল রাত দুটো নাগাদ কলেজের উল্টোদিকের বিল্ডিংয়ে বোম বার্স্ট করে। স্টেট ব্যাঙ্কের উল্টোদিকে একটা নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেই বাড়ির ফ্ল্যাটে ওরা বোমা বাঁধছিল। ছোটুদার বেশ অনেকটা পুড়ে যায়, ওকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পাপু বলে একটা ছেলের হাত উড়ে গেছে। তারপর আজ বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ পাহাড়পুর রোডে বিরাট গণ্ডগোল হল। ওখানে কলেজের ছাত্র মনে হয় ছিল না। পুলিশের একজন মারা গেল গুলি খেয়ে। মোক্তারের দুটো ছেলেকে ধরেছে বলে কংগ্রেস থেকে মেটিয়াব্রুজ থানার সামনে রাস্তা অবরোধ করেছিল। এইসব ছেলেরা কেউই কলেজে পড়ে না।
Leave a Reply