মুম্বইয়ের পর এবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল বীজ উৎসব। ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল তিনদিনের এই উৎসবে প্রথমদিন ছিল এক আলোচনাসভা। আলোচনার বিষয় ছিল ‘কৃষি-জীববৈচিত্র্য ও জৈব কৃষি’। সভার সূচনা করেন রথীন্দ্র নারায়ণ বসু। বক্তা ছিলেন অর্ধেন্দু শেখর চ্যাটার্জি, সৌরীন ভট্টাচার্য, অনুপম পাল, ভরত মানসাটা, দীপিকা কুন্দজী, কৃষ্ণা প্রসাদ, জয়প্রকাশ সিং এবং সবরমতী। বীজ সংরক্ষণের যে চেষ্টা চলছে সারা পৃথিবীতে, এদেশেও সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এমনকী আমাদের রাজ্যেও জেলায় জেলায় স্থানীয় দেশি বীজগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা রয়েছে। সংরক্ষণের প্রশ্নে আলোচনায় গুরুত্ব পায় বৈচিত্র্যের দিকটি। এই প্রসঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতির প্রসঙ্গও স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় আসে। কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় আমাদের বীজ ও জৈববৈচিত্র্যের দিকটিকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। যার হাতে পয়সা আছে সেই বীজ নিয়ন্ত্রণ করবে, এটা নিশ্চয় মানা যায় না। কিন্তু করণীয় কী? এই প্রসঙ্গে অর্ধেন্দু শেখর চ্যাটার্জি বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষই চাষি হয়ে উঠতে পারে’।
সৌরীন ভট্টাচার্য বীজ ও জৈববৈচিত্র্যের এই ভাবনাকে ভাষা ও শিক্ষার জগতে প্রসারিত করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ক্ষেত্রটি বৈচিত্র্য হারাতে বসেছে। সবই হচ্ছে বৈচিত্র্যের বিপরীতে’।
‘এগ্রিকালচারাল ট্রেনিং সেন্টার’-এর অনুপম পাল জানান, আমাদের দেশে ৮২,০০০ ধানের প্রজাতি ছিল। অবিভক্ত বাংলায় ১৫,০০০ দেশি ধান ছিল (১৯৩০ সালের সমীক্ষায় পাওয়া)। ফুলিয়ার চাষি প্রভাত দে একাই খেজুরছড়ি ধানের ১০০-র বেশি ধরন আবিষ্কার করেছেন। তাই তিনি বলেন, ‘চাষিরাই পারে, বৈজ্ঞানিকেরা পারে না’। আমরা কুশিক্ষার প্রভাবে বেশি ফলনের দিকে ঝুঁকেছি বটে। কিন্তু আমাদের দেশি ধানে ফলন কম হলেও খাদ্যগুণ বেশি থাকে। তাই চাষিরা বলে, ‘এটা অল্প খেলেই পেট ভরে যায়’।
দীপিকা কুন্দজী আমাদের দেখালেন, পণ্ডিচেরীতে গত ১৮ বছরে পতিত জমিতে তিনি কতরকম বেগুন, লাউ, লঙ্কা, ঢেঁড়স আর ভুট্টা ফলিয়েছেন। শুনলে মনে হয় মাঠে নেমে পড়ি।
এছাড়া, এই উৎসবে চাষিরা হাজির করেছিলেন নিজেদের ফলানো নানারকম বীজ, তরিতরকারি ইত্যাদি।
জিতেন নন্দী, কলকাতা, ৩০ এপ্রিল। ছবি শমীক সরকার
Leave a Reply