সুকুমার হোড় রায়, কলকাতা, ২০ এপ্রিল#
রাজ্য সরকারের বাজেট পেশের পর, আর্থিক সংকটে জর্জরিত, ধার দেনায় ডুবে থাকা কলকাতা পুরসভা ২০১৩-১৪ সালের জন্য ১৪৫ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করেছে, গত ১৬ মার্চ। বস্তি উন্নয়নের জন্য ১০৪ কোটি টাকা ও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা এবারের বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় পাঁচ কোটি টাকা বেশি। বর্ষায় বৃষ্টিতে জল যাতে না জমে, নিকাশি ব্যবস্থা উন্নতির জন্য ছ’ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আরও ২৯টি পাম্প বসানো হবে জানানো হয়েছে। জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ও জল অপচয় রোধে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলা হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোধে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। মহানগরীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নততর করতে দু-হাজার ছ-শো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ২০টি ঊর্দু স্কুল ও ১২টি অঙ্গনঅয়াড়ি কেন্দ্র করা হচ্ছে। পুরসভার স্কুলগুলির জন্য আরও শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পুরসভা বিনামূল্যে ছাতা, বই-খাতা, জুতো-মোজা দেবে, তার জন্য ব্যায়বরাদ্দ দু-হাজারক কোটি টাকার বেশি। দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষদের জন্য ৩০ হাজার টাকার স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলকাতার ১২ লক্ষ বস্তিবাসীর কল্যানে পুরসভা ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যায় করবে বলে জানিয়েছে। কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডের নাগরিক পরিষেবার জন্য ১৩ হাজার মানুষ নিয়োগ করা হয়েছে।
বাজেট পেশের পরেই বাজেট অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়, মাঝে কয়েকজন মেয়র পারিষদ বক্তব্য রাখে। কিন্তু বিরোধীদের বাজেট নিয়ে কোনও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বাজেট অধিবেশনের দিনই কলকাতা পুরসভার সামনে শাসক দলেরই কিছু কর্মীর বিক্ষোভের কথা শোনা গেল। ১০০ দিনের কাজ পাওয়া নিয়ে ওইদিন পুরসভার সদর দফতরের সামনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পুরনো দিনের কর্মীরা অভিযোগ জানাল। এদের অনেকেই একদম শুরু থেকে পার্টিতে থাকলেও এলাকার কাউন্সিলরের কাছে ১০০ দিনের কাজ চেয়ে পায়নি বলে অভিযোগ।
পরিশেষে একটা নৈরাজ্যের কথা না বলে পারছি না। কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশন, বিশেষ অধিবেশন ও বাজেট অধিবেশনে সাংবাদিকদের ভালো ভালো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়। এই প্যাকেট যারা সাংবাদিকদের দেওয়ার দায়িত্বে থাকে, সেই অতনু রায়, পিন্টু চক্রবর্তীদের ঘনিষ্ট কিছু লোক ওই ক’দিন দল বেঁধে হাজির হয়ে যায়। এরা অধিবেশন কক্ষে না বসে, যেখানে সাংবাদিকদের ফুড প্যাকেট দেওয়া হয়, সেই গুমটি ঘর ও তার পাশের চায়ের দোকানে দল বেঁধে জটলা করে। প্যাকেট দেওয়া শুরু হলে তারা হুড়োহুড়ি করে প্যাকেট নেয়। অনেককে নাম ধরে ডেকে ডেকে প্যাকেট দেওয়া হয়। তার ফল, সত্যিকারের সাংবাদিকদের অনেকে ফুড প্যাকেট পায় না। কলকাতা পুরসভায় এই চলছে অনেকদিন ধরে। শাসক দল বদলালেও ট্র্যাডিশনের বদল হয়নি।
Leave a Reply