শ্রীমান চক্রবর্তী, ২৫ জুলাই#
২৪ জুলাই শিয়ালদার সেবা সদনে ‘সুইচ অন’-এর উদ্যোগে ও কলকাতা সাইকেল আরোহী ও আধিকার জীবিকা রক্ষা কমিটি, কলকাতা সাইকেল সমাজ প্রভৃতি সংগঠনের সহযোগিতায় এক আলোচনা ও মতামত বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়, আসন্ন ‘জাতীয় নগর পরিবহণ নীতি’-কে সামনে রেখে।
অনিতা অরোরা ও রাজেন্দ্র রবি ছিলেন প্রধান আলোচক। প্রথমেই অনিতা অরোরা বলেন, ভারতের বিভিন্ন দেশের মহানগরগুলিতে মোটরবিহীন যন্ত্রচালিত যানকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে — বিশেষত ইউরোপ আমেরিকায়, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে। ভারতের নবগঠিত কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের ১০০টি শহরকে উন্নত করার কথা বলেছেন। এর অর্থ কি শহরে মেট্রো রেল, মনোরেল, মোটরগাড়ি চলাচল ও শপিং মল বানানোর ঢালাও ব্যবস্থা করা, না শহরে সকল শ্রেণীর মানুষের বসবাসের উপযুক্ত করা?
অনিতা অরোরা বলেন, শহরগুলিতে কত শতাংশ মানুষ কী কী ধরনের পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল, তার আনুপাতিক হারেই রাস্তায় সেই সমস্ত যানচলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। সেই হিসেবে শহরের রাস্তার কেবলমাত্র ৫ থেকে-৭\% প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের জন্য রাখা দরকার। তাছাড়া, শহরে যেখানে স্থান পর্যাপ্ত রয়েছে সেখানে সেখানে মোটরবিহীন যান চলাচলার আলাদা ব্যবস্থা করা দরকার। অরোরা বলেন, শহরের রাস্তার ধার দিয়ে নয়, মাঝখান দিয়েই ফুটপাত ও সাইকেল লেন হওয়া দরকার, নাহলে তা হকারদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। শহরের রাস্তায় বিভিন্ন যানের জন্য নির্দিষ্ট আলাদা ডিপোর ব্যবস্থা করা দরকার। শহরে রাস্তার পাশে হকারদের বসার জন্য ব্যবস্থা থাকা দরকার, আমাদের মতো জনবহুল দেশে স্বনির্ভর পেশাজীবীদের স্বাধীনভাবে উপার্জনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে।
অনিতা বলেন, শহরে ট্রাফিকের গতিবিধি ও যানজটের বিবেচনা করেই কোনো স্কুল, শপিং মল এবং রিয়েল এস্টেটের ছাড়পত্র দেওয়া উচিত। শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, তারা শহরকে কতটা যান-জটে আবদ্ধ করছে তার পরিমাপও যেন করা হয়। শহরে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারকারীরা নিয়মিত দুটি স্থান দখল করে নিচ্ছে তাদের পার্কিংয়ের জন্য, বাড়ির গ্যারেজ এবং কার-পার্কিং লট। অথচ শহরে অনেক মানুষের মাথার ওপরে ছাদ নেই। এই বৈষম্য কেন? অনিতা বলেন, মানুষের বাসস্থানের জায়গা দখল করে নিচ্ছে গাড়ি।
অনিতা বলেন, কলকাতা শহরে মোটরবিহীন পরিবেশবান্ধব যান চলাচলের ব্যবস্থা এখনও টিঁকে রয়েছে অনেকটাই।
আলোচনার দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা সাইকেল সমাজের পক্ষে থেকে শহরের ট্রাফিক নিষেধাজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে সারা শহরে সাইকেল চলাচলের জন্য লোকালয় ভিত্তিক গাইড ম্যাপ তৈরি করার কথা বলা হয়। এছাড়া সাইকেল-রিক্সা-ভ্যানের ওপর কলকাতা পুলিশের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনে আপিল ও তার সাথে জনশুনানির ব্যবস্থা করার দরকার বলে বিশেষজ্ঞগণ মত প্রকাশ করেন।
Leave a Reply