২৬ বছরের তিব্বতী যুবক ধেন্দুপ ফুনস্টক ২ এপ্রিল হাওড়া ব্রিজ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেয়। ৬ এপ্রিল তার দেহ উদ্ধার হয় গঙ্গা থেকে। তার গায়ে ছিল ‘ফ্রি টিবেট’ লেখা একটা টি-শার্ট।
এই ছেলেটি দার্জিলিঙে জন্মালেও তার পরিবারের সাথে কলকাতায় থাকত এবং ‘আসেম্বলি অফ গড চার্চ’ স্কুল এবং ‘স্কটিশ চার্চ কলেজ’ থেকে পড়াশুনা করেছে। এছাড়া সে ‘স্টুডেন্টস ফর ফ্রি টিবেট’ এর কো-অর্ডিনেটরও ছিল।
ছেলেটির মোবাইলের মেসেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, সে রুবি মুখার্জী নামের একজনকে মেসেজ পাঠিয়েছে। ইনি ‘গণসমন্বয়’ বলে একটি সংগঠন, যারা তিব্বতী রিফিউজিদের নিয়ে কাজ করে, তার কর্মী। প্রথম মেসেজটি ৩০ মার্চ পাঠানো। তাতে লেখা, ‘আমি একদম একা হয়ে যাচ্ছি কারণ আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করে কিছু বলতে পারছি না। আমি আমাদের জনগণকে বলতে চাই যে আত্মাহুতি দেওয়ার থেকে চিনা কনসুলেটের সামনের দরজায় ‘মুক্ত তিব্বত’ কথাটা লিখে দেওয়া বেশি ভালো’।
খবরে আরও জানা যায় ধেন্দুপ চীনের প্রতি তার বিরোধিতা জানাবার জন্য চীনা কনসুলেটের দরজায় ‘মুক্ত তিব্বত’ লিখতে যাবে বলে মনস্থিরও করে। যদিও সে তার আগে দিল্লিতে তিব্বতী যুবকের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনার পরে নিজেও আত্মাহুতি দেবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু রুবি তাকে এই ব্যাপারে নিরস্ত করেছিল বলে জানা যায়।
২ এপ্রিল সন্ধ্যেবেলা রুবি একটা মেসেজ পায় ধেন্দুপের কাছ থেকে। তাতে লেখা ছিল ‘রুবিদি, আমি দুঃখিত, আমি মিথ্যে বলেছিলাম। আসলে আমি যা করতে চাইছি সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং আজ রাতে যা ঘটবে তাতে বিচলিত হোয়ো না। আমি আমার ব্যাপারে কাউকে জড়াতে চাই না, তাই সেলফোন থেকে সমস্ত নম্বর মুছে দিলাম, শুধু তোমারটা রাখলাম কারণ তুমি আমার মনের চাহিদাটা বুঝতে পারো। আমি চাই স্বাধীন তিব্বত’।
এই মেসেজটা পাওয়ার পরপরই রুবি তাকে ফোন করে কিন্তু ফোনটা সুইচ অফ পায়। পরদিন সকালে ধেন্দুপের মা রুবিকে জানান যে ২ এপ্রিল সন্ধ্যের পর থেকে ধেন্দুপকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশও ধারণা করে যে এই মেসেজটা পাঠানোর পরেই ধেন্দুপ হাওড়া ব্রিজে যায় এবং গঙ্গায় ঝাঁপ দেয়। এছাড়া পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও জলে ডুবে মৃত্যুর প্রমাণ মেলে।
১০ মার্চ ২০১২ কলকাতার কলামন্দিরে ধেন্দুপের জীবনের শেষ বক্তৃতা শোনা গেছিল। তাতে সে বলেছিল, ‘আমাদের সংগ্রামের অর্থ চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নয়, চীনা ভাই-বোনদের প্রতি কোনো ঘৃণা বা বিদ্বেষও আমাদের নেই। শুধু আমরা চাই তিব্বতীদের যে সমস্ত জায়গা চীনারা অবৈধভাবে দখল করেছে, সেগুলো তারা তিব্বতীদের ছেড়ে দিয়ে চলে যাক’।
ধেন্দুপ ফুনস্টকের স্মরণে একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করছে ‘দ্য রিজিওনাল টিবেটান ইয়ুথ কংগ্রেস, দার্জিলিং’, আঠারোই এপ্রিল দার্জিলিং ‘টিবেটান ওয়েলফেয়ার অফিস’-এ, জানালেন ইয়ুথ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি, ডিকি ডোলকার।
মণিদীপা ভৌমিক, কলকাতা, ১৫ এপ্রিল ; তথ্যসূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ৯ এপ্রিল; হিন্দুস্তান টাইমস, ১২ এপ্রিল
Leave a Reply