শ্রীমান চক্রবর্তী, কলেজ স্ট্রিট পাড়া, ১৩ ফেব্রুয়ারি#
সাইকেল নিষেধ এলাকা বাড়ছে | |
@ | কলকাতায় আটত্রিশটি রাস্তায় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ তো ছিলই। কিন্তু বেআইনি ভাবে আরও বেশ কিছু রাস্তায় ণ্ণনো সাইক্লিং’ বোর্ড টাঙানো হয়েছে, যেমন ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের বিস্তীর্ণ এলাকা। এছাড়া বৈষ্ণবঘাটা-গড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের মাঝামাঝি অংশে বোর্ড টাঙানো হয়েছে, ণ্ণধীর গতির যানবাহন নিষিদ্ধ’। এভাবেই সাইকেল নিষিদ্ধ অঞ্চলের এলাকা বাড়ছে শহর কলকাতায়; |
গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বেলা সোয়া একটা নাগাদ আমি আমহার্স্ট স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে আছি বইমেলা যাওয়ার বাস ধরব বলে। হঠাৎ দেখি প্রায় পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি মাঝবয়সি এক সাইকেল আরোহীর সাইকেল টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সাইকেল আরোহীর সাইকেলের কেরিয়ারের পিছনে মোটা কাগজের বান্ডিল রাখা। এর কিছু পরেই পঁচিশ-ত্রিশ বছর বয়সি আরেকজন যুবক জিন্স ও ফুল হাতা গেঞ্জি ও পায়ে জকার জাতীয় জুতো পরা, আরেকজনের সাইকেল এভাবে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম এই দৃশ্যের একটা ছবি তুলতে পারলে ভাল হত। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কারও কাছে ক্যামেরা মোবাইল আছে কিনা? আবার ভাবছি কাউকে বললেই বা আমায় ছবি তুলে দেবে কেন?
আমি তখন রাস্তা পার হয়ে কলেজ স্ট্রিট-মুখী ট্রাফিক বুথের পাশে ফুটপাতের রেলিং ঘেঁসিয়ে দাঁড় করানো সাইকেলগুলির দিকে এগিয়ে গেলাম। একটু সামনে যেতেই একজন সাইকেল আরোহীর বুক পকেটের দিকে তাকিয়ে দেখি তার কাছে একটা ক্যামেরা মোবাইল আছে। আমি ওঁকে বলি, সাইকেল ধরছে যারা তাদের এবং যে স্লিপ দিচ্ছে তার একটা ছবি তুলে রাখুন। আমার পরিচয় দিয়ে বলি, আমরা বহুদিন ধরে বেআইনি এই ধরপাকড় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছি, তাই এর একটা ছবি পেলে আমাদের পত্রিকায় ছাপানোর সুবিধা হবে। ভদ্রলোক ছবি তুলতে গেলে হঠাৎ-ই স্লিপ কাটতে থাকা ভদ্রলোক রেগে বলে, ছবি তুলে কী করবেন? এরপর ওঁর নাম জানতে চাইলে উনি আরও রেগে প্রায় তেড়ে মারার ভঙ্গিতে বসা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে বলেন, আপনাকে নাম বলব কেন? কাউকে নাম জিজ্ঞেস করলে এরকম রাগতে আমি কোনোদিন এর আগে দেখিনি। আমি তখন পাশ থেকে বলি, আপনি ওঁর সাইকেল ধরেছেন, তাই উনি যদি নাম জানতে চান, তাহলে আপনি পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য, কেন না আপনি সিভিল ড্রেসে আছেন। উনি বলেন, নাম জেনে কী করবেন? কিছু করতে পারবেন? আর মশাই আপনি কে? এখানে কী দেখছেন? আমি বলি, আমি একজন সাংবাদিক? উনি বলেন, সাংবাদিক তো কী? কী করবেন আমার? আমি বলি, আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলিনি, ওঁর সাথে কথা বলছি। তখন উনি আমার দিকে তেড়ে এসে বলেন, যান যান এখান থেকে। মজা দেখতে হবে না? আমি নাম জানতে চাইলে আপনি রেগে যাচ্ছেন, পরিচয় জানতে চাওয়া কি অপরাধ? এর মধ্যে জিন্স পরে সাইকেল পাকড়াও করছিল যে যুবক, সে এসে বলে, থানায় ফোন কর, এই ছবি তুলতে থাকা লোকটা যেন ছাড়া না পায়? ওকে যেন কোর্ট থেকেই ছাড়াতে হয়। বলে ভদ্রলোকের লক করা সাইকেলটি হঠাৎ টানতে থাকে এবং বলে লক খুলুন? সাইকেল আরোহী বলেন, ঠিক আছে আমি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সেকথায় কান না দিয়ে ওরা সাইকেলটা টানতে থাকে। এই কথা চলতে থাকার সময়ে কৌতুহল দেখিয়ে কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়লে তাদেরকে সেখান দাঁড়াতে নিষেধ করেন সিভিল ড্রেসে থাকা তথাকথিত ট্রাফিক পুলিশ।
পুলিশের এই তথ্য সংগ্রহকারীরা এমন ভাবে লুকিয়ে সাইকেল আরোহীদের ধরছে যেন তারা দাগি আসামী, পালিয়ে আছে তাই ওঁদের ওভাবে ধরছে! আমার ওপর একটু রেগে উনি প্রায় তেড়ে এলেন এবং বললেন, সাংবাদিক না ঘণ্টা আমার জানা আছে, চলুন না থানায় দেখি আপনি কত বড়ো সাংবাদিক? আমি বললাম সেটা আপনাকে পরে এসে দেখিয়ে যাব। আমি এখন বইমেলায় যাচ্ছি, তাড়া আছে। আমি সাইকেল আরোহী ভদ্রলোকের নাম (নির্মল পাত্র) ও ফোন নাম্বার জানার পর ওঁকে বললাম, আমার জন্য আপনাকে হয়ত একটু ভোগান্তি পোহাতে হবে। কিন্তু কোর্টে গেলে আপনার টাকা কম লাগবে। পরে ফোন করতে জানতে পারি, নির্মলবাবুর সাইকেল মুচিপাড়া থানায় সন্ধ্যে পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। বহু অনুনয় বিনয়ের পর কোনোরকম রসিদ ছাড়াই ৯০ টাকা দেবার পর সাইকেল পাওয়া যায়।
এভাবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অবলম্বনকে ছিনিয়ে নিয়ে তার কাজের ক্ষতি করে, এই রক্ষক–ই–ভক্ষকদের জুলুম কবে বন্ধ হবে? কবে বা কলকাতার নাগরিক সমাজ ও আমরা সকলে মিলে সাইকেল চালিয়ে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হব কলকাতার সাধারণ মানুষ ও পরিবেশের স্বার্থে? শুধুমাত্র একটি অর্ডারকে দেখিয়ে বছরের পর বছর সাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের এই বেআইনি জুলুমবাজি কবে বন্ধ হবে? বন্ধ হবে পুলিশের এই বেআইনি তোলা আদায়?
Leave a Reply