সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১১ ফেব্রুয়ারি#
কর্পোরেটদের মূল চাহিদা — মুনাফা বা লাভ। সেই লাভের টাকার কিয়দংশ সরকারকে কর দিতেও তাদের আপত্তি, তারা মনে করে লাভের গুড় পিঁপড়েয় খাচ্ছে। তাই বিশ্ব জুড়েই কর্পোরেটরা লাভের গুড় চোরাপথে চালান করে দেয় সুইজারল্যান্ড, মরিশাস প্রভৃতি দেশগুলিতে — যেগুলির ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা গোপনীয়তায় মোড়া এবং ‘কর ফাঁকির স্বর্গ’ বলে পরিচিত। এরকমই একটি ব্যাঙ্ক — আমার আপনার সকলের চেনা কর্পোরেট ব্যাঙ্ক — এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক।
এই বহুজাতিক ব্যাঙ্কের সুইজারল্যান্ডের এক কর্মী আর্ভে ফালসিয়ানি ২০০৭ সালে ব্যাঙ্ক থেকে কাস্টমার ডাটাবেস ফাইলগুলি চুরি করে নিয়ে পালায়। তার প্রাথমিক মতলব ছিল সেগুলো চুরি করে শাঁসালো খরিদ্দারদের কাছে বিক্রি করা — কারণ সে জানত, এগুলি সব কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বানানো অ্যাকাউন্ট। অ্যাকাউন্টগুলি যাদের, তাদের নিজেদের দেশে জানাজানি হলে তাদের গ্রেপ্তার হতে হবে। কিন্তু ফালসিয়ানি ধরা পরে যায় ফ্রান্সে এসে। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে ওই সব ফাইলগুলো নিয়ে নেয় — প্রতিদানে তাকে ফ্রান্সে থাকতে দেয়। যদিও ফালসিয়ানি সুইজারল্যান্ডে একজন ‘চোর’, তাকে সে দেশের প্রশাসন খুঁজছে। ফরাসি সরকারের কাছ থেকে সেই ফাইল এসে পৌঁছায় ফরাসি মিডিয়া ল্য মন্দ-এর হাতে। একই সাথে ফরাসি সরকার এই ফাইলগুলি বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছেও পৌঁছে দেয়, যেসব দেশের নাগরিকদের নাম রয়েছে এই ফাইলে। মোট ২০৬টি দেশের ১,০৬,০০০ জন কাস্টমারের নাম রয়েছে এই ফাইলগুলোতে। জমা রাখা মোট ‘কালো টাকা’র পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার (= ৬ লক্ষ ২২ হাজার কোটি টাকার মতো)।
ল্য মন্দ একটি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থাকে আহ্বান করে, সারা পৃথিবী থেকে সাংবাদিকদের স্বেচ্ছা অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ ফাইলগুলি ঠিকঠাক করে সাজাতে — যাতে কাস্টমারের নাম, কোম্পানির নাম, দেশ, জমা টাকার পরিমাণ, কবে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, ক-টা অ্যাকাউন্ট আছে — ইত্যাদি ভালোভাবে সাজানো যায়। ভারত থেকে এতে অংশগ্রহণ করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস নামক মিডিয়াটি।
সম্প্রতি এই ফাইলগুলির একটা অংশ প্রকাশ করেছে ওই আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থাটি। সেখানে ভারতের বেশ কিছু কর্পোরেট গোষ্ঠীর প্রোমোটার, তাদের পরিবারের লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবের নাম রয়েছে, মোট নাম রয়েছে প্রায় তেরোশো জনের। দেশের বহু কর্পোরেট গোষ্ঠীরই নাম রয়েছে এখানে।
Leave a Reply