শমিত। শান্তিপুর। ১৭ জুলাই, ২০২০। #
তাঁতশিল্পে কাপড় বোনা ছাড়াও আনুষঙ্গিক অনেকরকম কাজে জড়িয়ে থাকেন অনেকেই। কেউ নলি পাকান, কেউ ড্রাম হাটেন, কেউ সানা বোয়া করেন। এখন কাপড় মাজার কাজে জড়িয়ে আছেন ব্লকের বিরাট সংখ্যক মানুষ। একই পরিবারের পুরুষ-মহিলা সকলে মিলে এই সমস্ত কাজে জড়িয়ে থাকেন। তাঁতে বোনা আলো কাপড় মহাজনের কাছ থেকে নিয়ে তাতে মাড় দিয়ে টঙ্ক করা হয়। তারপর আয়রন ও ভাঁজাই হয় তাঁত কাপড়। এই মাজার কাজে বা মাড় দেওয়ার কাজে জড়িত এক শ্রমিক অসিত হালদারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। অসিত জানালেন, এতদিন করোনা মারছিল, লকডাউনে হাতে কাজ ছিলনা; এখন মারছে ওপরওয়ালা। এত বৃষ্টিতে কাজের খুবই বিঘ্ন ঘটছে। হাতে যা’ও বা কাজ এসেছে, কিন্তু বৃষ্টির জন্য তা করা যাচ্ছেনা। টানা ঠিকঠাক রোদ না হলে কাপড় মাড়ের খুবই অসুবিধা হয় জানালেন অসিত। মহাজনের ঘরে জমে থাকা আলো কাপড় মাড়-এর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। কাজ পাওয়া যাচ্ছে; কিন্তু বাদ সাধছে আকাশ। অসিতের কাছে জানা গেল সারা বছরই মাড় দেওয়ার কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু বর্ষাকালে খুবই অসুবিধা হয়।
অন্যান্য বছর এ সময়টা পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবছর দু’তিন মাস লকডাউনে কাজ না হওয়াতে খুবই টানাটানি চলছিল। কাজ ছিল না। যা’ও বা কাজ পাচ্ছি তা তুলতে পারছিনা। একটা কাপড় মাজলে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা এমনকি ৩০ টাকাও পাওয়া যায়। সাদা শাড়িতে মজুরি কম। রঙিন শাড়িতে মজুরি বেশি পাওয়া যায়। অসিতের মত হাজার হাজার শ্রমিক আবার কাজে লেগেছে পুরোদমে। লকডাউনের সময় আমের মরশুম হওয়াতে কয়েকটা আমগাছ জমা নিয়েছিলেন অসিতরা। তিনজন মিলে ৪,২০০ টাকায় শেয়ারে জমা নেওয়া আমের ব্যবসা করে এক এক জনের ভাগে ১,২০০ টাকা করে লাভ হয়। মোট ৭ টা গাছ জমা নেন অসিতরা। কিন্তু আমফান ঝড় এসে এবছরে আমের খুব ক্ষতি করে। না হলে ভালো লাভ থাকত বলে জানালেন অসিত। কাঁচা আম আড়ৎদারদের বিক্রি করে দেওয়ায় লাভটা বেশ কমে যায়। আড়তে মাল দিয়ে দেওয়াতে লাভ কিছু কম হলেও ঝুঁকি কিছু কম থেকেছে। না হলে লোকসান বেশি হত, পরিশ্রম জলে যেত বলে জানালেন অসিত। এখন কাপড় মাজা’র কাজটা শুরু হয়েছে। কাজও কিছু কিছু পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বর্ষাই এই আকালে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আক্ষেপ অসিতদের।
Leave a Reply