শমিত, শান্তিপুর, ২৩ জুলাই#
গঙ্গা নদী সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঙ্গা উৎসব পালিত হলো শান্তিপুরে গঙ্গা পূজার দিন শান্তিপুর ভাগীরথী গঙ্গার তীরে শান্তিপুর শুগান আশ্রমে শান্তিপুর বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতির উদ্যোগে ‘গঙ্গা উৎসব’ পালিত হল। সারাদিন ধরে এই উৎসবে স্থানীয় কৃষিজীবি মানুষ, ধীবর, ছাত্র-ছাত্রী সহ বহু মানুষ যোগ দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শঙ্করাচার্য রচিত ‘গঙ্গা স্তোত্র’ এবং মহামুনি বাল্মীকি রচিত ‘গঙ্গাষ্টকম’ উদাত্ত কণ্ঠে পাঠ করা হয়। এরপর দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’ গান সহ গঙ্গা মহাত্ম বর্ণনাকারী বিভিন্ন গান গেয়ে শোনান শ্রী ষষ্ঠী দত্ত। ‘গঙ্গা’ সম্পর্কিত বিভিন্ন কবিতা পাঠ করেন সুরজিৎ সাহা, পূরবী মজুমদার, ও সফিউল আনসারি।
গঙ্গা উৎসব কেন — এই মর্মে উপস্থাপিত বক্তব্যে শান্তিপুর বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতির সম্পাদক ডাঃ গৌতম কুমার পাল বলেন — গঙ্গা ভারতবর্ষের সংস্কৃতি – ইতিহাস অর্থনীতি তথা জীবনের সর্বক্ষেত্রের জীবন রেখা (Life line)। গঙ্গা যথার্থই ভারতবাসীর কাছে মাতৃসমা। তাই গঙ্গাকে বর্ণনা করা হয় হয়েছে গঙ্গা মাতা রূপে। সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে ৪০ কোটি মানুষ গঙ্গার উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এছাড়া আরো কতভাবে যে ভারতবর্ষ গঙ্গার প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল তা এত অল্প পরিসরে প্রকাশ করা অসম্ভব। পানীয় জল, কৃষি, জলবায়ু, মাছ উৎপাদন, পণ্য পরিবহন, জলপথ সহ সাহিত্য-দর্শন-সংস্কৃতিচর্চা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঙ্গা সমৃদ্ধশালী করেছে।
প্রতিবছর গঙ্গার ঘাত ধরে ৫২৫ ঘন কিমি জল আর ৭৩ কোটি টন পলি ভেসে আসে। গঙ্গা নদীর এই কার্যকারীতা জানা সত্বেও গঙ্গা দূষণ ঘটানো হচ্ছে গঙ্গার দুধারে গড়ে ওঠা শহর ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক সার মিশ্রিত জল নদীতে ফেলে। এই দূষণের জন্য দায়ী বিভিন্ন শিল্প (২৫ শতাংশ) আর বিভিন্ন শহরের বর্জ্য পদার্থ (৭৫ শতাংশ)। এর মধ্যে ফুল বেলপাতা, হাসপাতাল-নার্সিং হোমে ব্যবহৃত বর্জ্য, মৃতদেহ দাহ করা পরিত্যক্ত বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা অ্যাকশান প্ল্যান নেওয়া হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বস্তরে সেইভাবে গঙ্গা দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিকল্পনাটি সেই অর্থে কার্যকরী হতে পারেনি। তাই গঙ্গা নদীর ঐতিহ্য কার্যকারীতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে শান্তিপুর বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতি ‘গঙ্গা উৎসব’ প্রবর্তন করল এই বছর এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে এতদ্ অঞ্চলে আরো সচেতন করা সম্ভব হবে। ঐতিহ্যকে সম্বল করেই সামাজিক আন্দোলন শক্তিশালী করা সম্ভব বলেই গঙ্গা পূজার দিনকে গঙ্গা উৎসব পালন করার দিন রূপে বেছে নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কলকাতার সবুজ মঞ্চের প্রতিনিধি শ্রীমতী পামেলা মুখোপাধ্যায় বলেন গঙ্গা নদীতে স্নান করার সময় আমরা যেন কেউ মল-মূত্র ত্যাগ না করি এবং অন্যদেরও সে সম্পর্কে সচেতন করি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি রূপে উপস্থিত ছিলেন শ্রী কুণাল ঠাকুর। তিনি শান্তিপুর বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সমিতির আন্দোলনকে সর্বতোভাবে সহায়তার আশ্বাস দেন। সন্ধ্যায় অসংখ্য প্রদীপ নদীতে ভাসিয়ে এই উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। এর পর সন্ধ্যায় স্থানীয় রায় কোচিং সেন্টার -এর ছাত্র-ছাত্রীরা সুকুমার রায়ের নাটক ‘অবাক জলপান’ মঞ্চস্থ করে।
Leave a Reply