পাকিস্তানের লাহোরের কোট লাখপত জেল-এ তেইশ বছর ধরে বন্দী, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ভারতীয় নাগরিক সরবজিত সিং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন লাহোরের একটি হাসপাতালে। জেল-এর মধ্যে তার ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। ভারত থেকে তাকে দেখে ফিরে এসে তার পরিবারের সদস্যরা মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করেছে, সুপরিকল্পিতভাবে তার ওপর হামলা হয়েছে, জেল কর্তৃপক্ষই আক্রমণকারীকে জেলে ঢুকতে দিয়েছে।
সরবজিতের দিদি দলবীর কৌর মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেছেন, ‘আমি মনে করি এটা ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মিলিত ষড়যন্ত্র। আমরা কাসভ আর আফজল গুরুকে ফাঁসি দিয়েছি, ওরা সরবজিতকে মারবে।’ সরবজিতের চিকিৎসা ও দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলে তিনি বলেছেন, ভাইকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুনির্দিষ্ট বন্দোবস্ত যতক্ষণ না সরকার করছে, ততক্ষণ তিনি কিছু খাবেন না। দেশের নাগরিককে বাঁচাতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত, দাবি করেছেন দলবীর।
রাষ্ট্রনীতি আর কূটনীতির কাছে বন্দীর মা-দিদির মানবিক আবেদনের মূল্য কতটুকু? মূল্য যে নেই, তার প্রমাণ, বর্ডার পেরিয়ে আসা মাত্র বিএসএফ সরবজিতের পরিবারকে হেফাজতে নিয়ে নেয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। রাজনীতির অমানবিক উলঙ্গ চেহারাটি আরেকবার স্পষ্ট হয়ে যায়।
এরই প্রতিধ্বনি শোনা যায়, পূব দিকের সীমান্ত পেরিয়ে, বাংলাদেশের সাভারে চারশ’ শ্রমিকের কারখানা ধ্বসে তিলে তিলে মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা তরুণ প্রজন্মের গলায়, ‘যে রাজনৈতিক কাঠামোটা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, সেই কাঠামোর কোথাও মানবিকতার কোন স্থান নেই। এটা একটা খেলা মাত্র, আমরা স্রেফ গুটি। এই কাঠামো যতদিন থাকবে আমাদের এইসব নৈতিক মানবিক দাবি দাওয়ার কোন স্থান নেই।
সারা পৃথিবীজুড়েই রাজনীতি কাঠামো আজ ভীষণ অমানবিক। কর্পোরেট স্ট্রাকচার আর ওয়ার ইকোনমিকসের জটিল কুটীল চালে মানুষের কোন জায়গা নেই।
এই কথাটাই ভাবছি, এমন একটা রাজনৈতিক কাঠামো দরকার, চিন্তা দরকার, শক্তি দরকার যার ভিত্তি হবে মানবিকতা। মানুষকে ভালোবাসার শক্তির উপর গড়ে উঠবে একটা সমাজ। দেশের প্রধাণমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিদের গলা দিয়ে ভাত নামবে না যখন শাহীনারা অর্ধমৃত অবস্থায় আটকে থাকবে…’
Leave a Reply