কুশল বসু, কলকাতা, ৪ মে#
গত ১৮ এপ্রিলের হিমানী তুষার-ধসের কারণে ১৬ জন নেপালি গাইড মারা গিয়েছিল এভারেস্টের রাস্তায়, এক এবং দুই নম্বর বেস ক্যাম্পের মাঝখানে খুম্বু আইসফলের নিচে। এভারেস্টের ইতিহাসের ভয়ংকরতম এই দুর্ঘটনার পর নেপালি গাইডদের অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে গেল এ বছরের মতো এভারেস্ট অভিযান। প্রায় ৬০০ এভারেস্ট যাত্রী, প্রায় প্রত্যেকেই বিদেশি এবং অধিকাংশই পশ্চিমি দেশগুলোর, যারা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এসেছিল অ্যাডভেঞ্চারে, তারা ফিরে গেল দেশে। কেউ স্বেচ্ছায়, বেশিরভাগই নেপালি সরকার ও গাইডদের গালমন্দ করতে করতে।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এভারেস্টের ‘সিজন’ শুরু হয়। তখন বিদেশি পর্বতারোহীরা উঠতে শুরু করে। কিন্তু তার আগে থেকেই খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় গাইডরা (যাদের বেশিরভাগই শেরপা জাতিভুক্ত) কেজি কেজি জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে উঠে যায় এভারেস্টের গায়ে। ওইদিনও রাত থাকতেই গাইডরা রওনা দিয়েছিল, পিঠে অক্সিজেন, স্টোভ, যন্ত্রপাতি, তাঁবু প্রভৃতি নিয়ে। এইসব কাজ করার জন্য এক মরশুমে গাইডদের রোজগার যা হয়, তা নেপালের মানুষদের গড় বাৎসরিক রোজগারের সাত আট গুণ। ফলে পায়ে পায়ে ঝুঁকি থাকলেও ফেলতে পারে না কেউই।
আজ থেকে বিশ বছর আগেও এভারেস্টে ওঠা এত সহজ ছিল না, এত লোক আসতও না প্রতিবছর। কিন্তু এখন টাকা দিলেই এভারেস্টে ওঠা যায়। কর্পোরেট অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানিগুলি দু-তিনমাস ধরে ট্রেনিং করায়, তারপর গাইডরা প্রায় কোলে করে নিয়ে অভিযাত্রীদের পৌঁছে দেয় এভারেস্টের চূড়োয়। এবছর এর মধ্যেই ছশো জন জড়ো হয়েছিল এভারেস্টে উঠবে বলে। এর ওপর যোগ হয় নেপালি গাইডরা। সংবাদে প্রকাশ, এবারে কিছু ইউরোপিয়ান কোম্পানি নিজেরা গাইড ভাড়া করে এনেছিল, এই নিয়ে স্থানীয় গাইডদের সঙ্গে বচসাও বেধেছিল তাদের।
২৪ এপ্রিল দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা একটি মিটিংয়ে স্থানীয় শেরপারা সিদ্ধান্ত নেয়, যারা মারা গেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই বছর তারা এভারেস্ট যাত্রা বন্ধ রাখবে। তার আগে, বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানি দাবি তুলেছিল, নেপালি সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো হোক, কিন্তু এবছরের যাত্রা যেন বাতিল না হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেপালি শেরপারা দেখিয়ে দিল, ক্ষতিপূরণ বা অভিযানের টাকার লোভের চেয়ে মনুষ্যত্বই বড়ো।
Leave a Reply